বউ-শাশুড়ির সম্পর্ক সবসময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। এই সম্পর্কটি প্রায়শই টানাপোড়েনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এই সম্পর্কটিকে মধুর করে তোলা সম্ভব। শাশুড়ির প্রতি বউয়ের সম্মান থাকা উচিত নিজের মায়ের প্রতি যেমনটি থাকে ঠিক তেমন। অন্যদিকে শাশুড়িরও উচিত বউয়ের প্রতি সম্মান রাখা। তাকে নিজের মেয়ের মত স্নেহ করা।
চলুন জেনে নিন কিভাবে শাশুড়ি ও বউ দুজনে মিলে এই সম্পর্কটিকে আরও মজবুত করতে পারেন-
শাশুড়ির জন্য কয়েকটি পরামর্শ:
আধুনিকতাকে আঁকড়ে ধরুন: অনেক শাশুড়ি চায় তার নাতি নাতনীদের ঠিক সেভাবে লালন পালন করা হোক যেমনটি তাদের আমলে করা হয়েছে। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। তাদের আমলের সবকিছুই যে সঠিক হবে এটি ভাবার কোন কারণ নেই। কারণ যুগ পরিবর্তনের সাথে সাথে অনেক ধরনের আধুনিক প্রযুক্তি এসেছে। তাই বর্তমান যুগের মা তাদের সন্তান্ লালন পালন করতে চায় আধুনিকতার সাথে তাল মিলিয়ে। তাই তাদের এই স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা উচিত না শাশুড়িদের। তবে হ্যাঁ, যেটা ভালো সেটা অবশ্যই তারা তাদের বউদের শিখিয়ে পড়িয়ে নেবেন এটাই কাম্য।
ছেলের বউয়ের বাপের বাড়ির সাথে সম্পর্ক ভালো রাখুন: ছেলের বউয়ের বাপের বাড়ির সাথে সম্পর্ক ভালো রাখার চেষ্টা করতে হবে। সব সময় দেখা যায় মেয়ের বাবা মা একটু দুর্বল থাকেন শুধু মাত্র মেয়ের সুখের কথা ভেবে।বউয়ের তার বাবা মার প্রতি দায়িত্ব্ ও কর্তব্যকে অনুপ্রেরণা দেয়া উচিত শাশুড়ির। ছেলের বউকে বাবার বাড়িতে দেয়া উচিত। অনেক শাশুড়ি ছেলের বউয়ের বাবার বাড়ি যাওয়া পছন্দ করেন না। তাদের এ ধরনের মনোভাব কখনই পোষণ করা উচিত না।
ছেলেকে মধ্যস্থতাকারী না করে দুজনে মিলে সমস্যা সমাধান করুন: শাশুড়ি-বউ সম্পর্কের ফাঁটলের সবচেয়ে বড় কারণ হল তার ছেলে। শাশুড়ি চায়না ছেলে তার চেয়ে বেশি বউকে প্রাধান্য দিক। অন্যদিকে বউ চায়না মাকে বেশি প্রাধান্য দিক। তাই তাদের মধ্যে শুরু হয় দ্বন্দ্ব যার জন্য বলির পাঠা হতে হয় বেচারা ছেলেকে আর সাংসারিক এসব অশান্তির জন্য সে মানসিক ও শারীরিক অসুস্থতায় ভুগে।
ছেলের বউকে লেখাপড়ার সুযোগ দিন: ছেলের বউ যদি লেখাপড়া করতে চায় তাকে সে ধরনের সু্যোগ অবশ্যই দিতে হবে। কারণ মা সঠিক ভাবে শিক্ষিত না হলে তার সন্তান কোনদিন ভালো কিছু শিখবেনা। তাই নিজের নাতি নাতনীর কথা ভেবে হলেও প্রত্যেক শাশুড়ির উচিত ছেলের বউকে লেখাপড়ার সুযোগ দেয়া।
বউয়ের কর্মজীবনকে সমর্থন করুন: আজকাল যে সমস্যা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় তা হলো ছেলের বউয়ের চাকরি করা নিয়ে দ্বন্দ্ব। অনেক শাশুড়িই চান না তাদের ছেলের বউ চাকরি করুক। এ ধরনের চিন্তা ভাবনা অবশ্যই তাদের দূর করা উচিত কারণ বর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে স্বামী স্ত্রী উভয়েই পরিবারের জন্য অর্থ উপার্জন করে। ছেলের বউ কাজে কর্মে একটু ভুল করে থাকলে তাকে কোনদিন বকাঝকা করা উচিত না বরং আদরের সাথে তার ভুল শুধরে দেয়া উচিত।
বউদের জন্য কয়েকটি পরামর্শ:
স্বামীকে বাবা-মার প্রতি দায়িত্ব পালন করতে উৎসাহিত করুন: অনেক বউ চায় তার স্বামী শুধু মাত্র তার দিকে খেয়াল রাখুক। কিন্তু এ ধরনের মনোভাব ভুলেও রাখলে চলবে না। কারণ এটা ভুলে গেলে চলবে না যে তার স্বামী কারো সন্তান যে সন্তানের কাছে তার মা কিছু আশা করে, কিছু দাবি করে। আর তাই বউদের উচিত তাদের স্বামীদের বরং উৎসাহিত করা বাবা মার প্রতি দায়িত্ব্য ও কর্তব্য পালন করতে।
সন্তানদের দাদা-দাদীকে ভালোবাসতে শিখান: সন্তানকে অবশ্যই দাদীর স্নেহ থেকে বঞ্ছিত করা উচিত না। তাদের সন্তানদের স্বাধীনতা দেয়া উচিত দাদা দাদীর কাছে গল্প শোনার, তাদের আদর-যত্ন পাবার। নাতি-নাতনীদের কাছে পেয়ে তাদের একাকীত্বও অনেকটা দূর হয়ে যায়।
শাশুড়ির পছন্দকে সম্মান করুন: শাশুড়ির পছন্দের খাবার রান্না করা উচিত ছেলের বউদের। শাশুড়ি কত টুকু ঝাল খায়, কোন মসলা খায়, কোন মসলা খান না সেসব ছোট খাট দিকেও লক্ষ্যরাখা উচিত। শাশুড়ি পছন্দ করেন না এমন কোন কাজ অবশ্যই করা উচিত না। কারণ এতে শ্বাশুড়ির তার ছেলের বউয়ের উপর থেকে মন উঠে যেতে পারে।
বিশেষ দিনগুলোতে শাশুড়িকে উপহার দিন: বিশেষ দিন গুলোতে সারপ্রাইজ দেয়া যায় শাশুড়িকে। যেমন শাশুড়ির জন্মদিন, শ্বশুডর-শাশুড়ির বিয়ে বার্ষিকী ইত্যাদি। এসব দিনে শাশুড়িকে উচিত সুন্দর সুন্দর উপহার দেয়া, তাকে ঘুরতে নিয়া যাওয়া।
শাশুড়ির অসুস্থতাকালে তার যত্ন নিন: শাশুড়ির অসুস্থতার সময় সবচেয়ে বেশি দরকার পড়ে তার ছেলের বউকে। এসময় পিছপা হলে চলবেনা। নিজের মা কে যেমন ভাবে যত্ন করে ঠিক তেমন ভাবে শাশুড়ির যত্ন নিতে হবে। শাশুড়িকে নিজের মায়ের মতই ভাবতে হবে।
মনে রাখতে হবে, বউ-শাশুড়ির সম্পর্ককে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে গড়ে তুললে সুখী সংসার গড়তে সহায়তা পাওয়া যায়।
সম্পাদক : শাদমান আল আরবী | নির্বাহী সম্পাদক : তানভীর আল আরবী
ঠিকানা : ঝাউতলা, ১ম কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০। ফোন : ০১৩১৬১৮৬৯৪০, ই-মেইল : [email protected], বিজ্ঞাপন: [email protected], নিউজরুম: [email protected] © ২০২৩ রাইজিং কুমিল্লা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Design & Developed by BDIGITIC