মার্চ ৩০, ২০২৫

রবিবার ৩০ মার্চ, ২০২৫

প্রাচীন যে মসজিদের ভেতর ইমামসহ মাত্র ৭ জন নামাজ পড়তে পারেন

চৌজা পুরাকীর্তি মসজিদ
ছবি: সংগৃহীত

নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার চৌজা গ্রামে অবস্থিত দেশের অন্যতম ক্ষুদ্রতম ও প্রাচীন মসজিদ ‘চৌজা মসজিদ’। প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর এই মসজিদটি কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে। তবে, সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মসজিদটির সৌন্দর্য হারাতে বসেছে।

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সুলতানি আমলের স্থাপত্যরীতিতে তৈরি এই মসজিদটি অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষদিকে নির্মিত। এক গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদের আয়তন ১৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্থ। মসজিদের দেয়ালের পুরুত্ব প্রায় ৩ ফুট ৯ ইঞ্চি। মসজিদের মূল দরজাটির উচ্চতা ৫ ফুট এবং উত্তর ও দক্ষিণ পাশের ছোট দুটি দরজার উচ্চতা ৪ ফুট ৯ ইঞ্চি।

মসজিদের ভেতরে ইমামসহ মাত্র সাতজন মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। তিনটি খিলান দরজা ও চার কোণে চারটি বুরুজ বা মিনার রয়েছে। মসজিদের মূল দরজা, উত্তর ও দক্ষিণের দরজা এবং মেহরাবের ওপরের অংশে মোট আটটি ছোট মিনার রয়েছে। মসজিদের তিনটি খিলান দরজার ওপরে চালা আকৃতির নকশা করা এবং প্রতিটি বুরুজ বা মিনারের নিচের অংশে কলস আকৃতির নকশা রয়েছে। মসজিদের প্রবেশ দরজার ওপর পাঁচটি কাঠি টাঙানো আছে, যা দেখে অতীতে নামাজের ওয়াক্তের হিসাব করা হতো।

স্থানীয় বাসিন্দা ও স্কুলশিক্ষক আলাউদ্দিন হোসেন জানান, মসজিদটি কবে নির্মিত হয়েছে, তা তাদের পূর্বপুরুষরাও জানেন না। প্রতি জুমায় দূরদূরান্ত থেকে অনেক মুসল্লি এখানে নামাজ আদায় করতে আসেন। মুসল্লিদের সংকুলান না হওয়ায় ২০০৪/০৫ সালের দিকে মসজিদের সামনের অংশে মেঝে পাকা করে নামাজের ব্যবস্থা করা হয়। বর্তমানে ভেতরে-বাইরে মিলিয়ে প্রায় ১০০ জন মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন।

১২ বছর ধরে এই মসজিদের ইমামতি করছেন হাফেজ রায়হান মণ্ডল। তিনি জানান, এই মসজিদে জুমার নামাজসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা হয়। মসজিদের ভেতরের অংশে একজন ইমাম ও ছয়জন মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। ২০০৪ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মসজিদটির কিছু অংশ সংস্কার করে।

বর্তমানে মসজিদটিতে শেওলা জমে এর সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া, অজু ও শৌচাগারের ব্যবস্থা না থাকায় মুসল্লিদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

নওগাঁর পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের কাস্টোডিয়ান মুহাম্মদ ফজলুল করিম জানান, চৌজা মসজিদ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সংরক্ষিত একটি পুরাকীর্তি। প্রত্নতাত্ত্বিক দিক থেকে এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থাপনা। দেশের অন্যতম প্রাচীন ক্ষুদ্রতম মসজিদ এটি, যা এতদিন দৃষ্টির আড়ালে ছিল। মসজিদটি পরিদর্শন করে সংস্কারের প্রয়োজন হলে কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।