তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে সাব-কন্ট্রাক্ট কারখানা ব্যবহারকারী রপ্তানিকারকরাও এখন থেকে সরকারের নগদ সহায়তা পাবেন। এতদিন শুধুমাত্র নিজস্ব কারখানায় উৎপাদিত পোশাকের জন্যই এই সুবিধা প্রযোজ্য ছিল। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সাব-কন্ট্রাক্ট কারখানার মাধ্যমে উৎপাদিত পোশাক রপ্তানির ওপর ০.৩০ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া হবে।
যদিও এটি এখনো অর্থ উপদেষ্টার অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে, তবে এই উদ্যোগকে পোশাক শিল্পের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, হা-মীম গ্রুপের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে আলোচনা করে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সাব-কন্ট্রাক্ট কারখানাগুলো যেহেতু সরাসরি রপ্তানি করে না, তাই তাদের পক্ষে সরাসরি প্রণোদনার টাকা নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ তাদের কাছে বিল অব এন্ট্রি থাকে না। তবে রপ্তানিকারকদের মাধ্যমে তারা পরোক্ষভাবে এই সুবিধা ভোগ করতে পারবে। এফবিসিসিআই প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, এই প্রণোদনার কারণে রপ্তানিকারকরা আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছ থেকে কিছুটা বাড়তি দাম আদায় করতে পারবেন এবং প্রণোদনার অংশীদার হিসেবে সাব-কন্ট্রাক্ট করা কোম্পানিগুলোকে এর সুফল দিতে পারবেন।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এই সিদ্ধান্তকে শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য একটি বড় অবদান বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি জানান, ভবিষ্যতে সাব-কন্ট্রাক্ট কারখানাগুলোর জন্য সরাসরি প্রণোদনার ব্যবস্থা করা যায় কি না, সে বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিবেচনা করবে।
যদিও সরকার প্রণোদনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তবে বিজিএমইএ প্রণোদনার হার আরও বাড়ানোর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চাপ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মার্কিন শুল্ক, এবং অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সংকটের কারণে পোশাক খাত বর্তমানে চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। বিজিএমইএ’র প্রস্তাবিত নতুন হারগুলো হলো:
বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইপিবি’র তথ্য অনুযায়ী, পোশাক রপ্তানি খাত প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৩৭ বিলিয়ন ডলার, এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) এই রপ্তানি দাঁড়িয়েছে ৪০.২০ বিলিয়ন ডলারে, যা গত বছরের তুলনায় ৯.৮৩ শতাংশ বেশি।
তবে বিজিএমইএ বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে পোশাকের মূল্য না বাড়ায় রপ্তানিকারকরা এখনও চাপে রয়েছেন। এর ফলে শিল্পে বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে এবং যন্ত্রপাতি আমদানিও প্রায় ২৪.৩৮ শতাংশ কমেছে, যা শিল্পের ভবিষ্যতের জন্য উদ্বেগজনক।
বিকেএমইএ প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম বলেন, "যিনি ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খুলবেন, সেই রপ্তানিকারকই প্রণোদনার টাকা পাবেন।" তিনি আরও স্পষ্ট করে বলেন, যারা নিজেদের কারখানা না রেখে শুধু ট্রেডার বা বায়িং হাউজ হিসেবে কাজ করে, তারা এই সুবিধা পাবে না।
বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের এই নতুন সিদ্ধান্তে দেশের প্রায় ১০ শতাংশ তৈরি পোশাক রপ্তানি সম্পন্নকারী সাব-কন্ট্রাক্ট ফ্যাক্টরিগুলোর অংশ আরও বাড়বে। ছোট কারখানার মালিক এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা মনে করছেন, এই প্রণোদনার মাধ্যমে ছোট কারখানাগুলো তাদের উৎপাদন বাড়াতে পারবে এবং নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করতে সক্ষম হবে। এবং এই উদ্যোগের ফলে দেশের ছোট ও মাঝারি আকারের পোশাক কারখানাগুলো ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবেন।
সম্পাদক : শাদমান আল আরবী | নির্বাহী সম্পাদক : তানভীর আল আরবী
ঠিকানা : ঝাউতলা, ১ম কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০। ফোন : ০১৩১৬১৮৬৯৪০, ই-মেইল : [email protected], বিজ্ঞাপন: [email protected], নিউজরুম: [email protected] © ২০২৩ রাইজিং কুমিল্লা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Design & Developed by BDIGITIC