
প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘কাজিকি’ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসছে। এর প্রভাবে সম্ভাব্য বিপর্যয় এড়াতে ভিয়েতনামজুড়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানার আগেই প্রাণহানির ঝুঁকি কমাতে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রায় ৫ লাখ ৮৬ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে।
আবহাওয়া দফতরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, কাজিকি ক্রমশ আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে। এর কেন্দ্রস্থলে বাতাসের গতিবেগ এরই মধ্যে ঘণ্টায় ১৬৬ কিলোমিটার ছাড়িয়ে গেছে।
ধারণা করা হচ্ছে, সোমবার (২৫ আগস্ট) এটি যখন উপকূলে আঘাত হানবে, তখন এর শক্তি আরও বাড়বে, যার প্রভাবে ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
ঝড়ের সম্ভাব্য আঘাতপ্রবণ এলাকাগুলোর মধ্যে ভিয়েতনামের কেন্দ্রীয় প্রদেশ থান হোয়া, কোয়ান ত্রি, হিউ এবং ডা নাং-এর বাসিন্দাদের জরুরিভিত্তিতে বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঝড়ের কারণে ভিয়েতনামের বিভিন্ন অঞ্চলে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং সমুদ্রে সব ধরনের নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মাছ ধরার নৌকা থেকে শুরু করে পর্যটকদের জাহাজ পর্যন্ত সব ধরনের জলযান এখন বিপদের মুখে।
কাজিকি এর আগে চীনের হাইনান দ্বীপের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে, যেখানে এর প্রভাবে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়েছে। স্থানীয় আবহাওয়া বিভাগ আরও ৩২০ মিলিমিটার বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে।
ঝড়টি ধীরে ধীরে তাইওয়ানের দিকেও অগ্রসর হচ্ছে। তাইওয়ানে প্রবেশের পর এর শক্তি কিছুটা কমলেও, তখনও বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত থাকতে পারে। এর সঙ্গে ৩০০ থেকে ৪০০ মিলিমিটার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি, ২ থেকে ৪ মিটার উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে, যা উপকূলীয় অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি করতে পারে।
উদ্ভূত জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশজুড়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ভিয়েতনামের কৃষি মন্ত্রণালয় সতর্ক করে বলেছে, এই ঝড়ের কারণে ফসলের, মাছের খামারের এবং সমুদ্র-নির্ভর অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। এরই মধ্যে ভিয়েতনাম এয়ারলাইন্স রবিবার ও সোমবারের ২২টি ফ্লাইট বাতিল করেছে।
কর্তৃপক্ষ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তারা বলছেন, এবারের ঘূর্ণিঝড় কাজিকি গত বছরের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াগির’-এর মতোই শক্তিশালী হতে পারে। ইয়াগির-এর আঘাতে পুরো অঞ্চল জুড়ে বিপর্যয় নেমে এসেছিল এবং শুধু ভিয়েতনামেই প্রাণ হারিয়েছিলেন অন্তত ৩০০ জন। এই কারণে কাজিকিকে ঘিরেও চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
আবহাওয়াবিদ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তারা উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দাদের দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য বারবার সতর্ক করছেন, যাতে প্রাণহানির সংখ্যা সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখা যায়।
সূত্র: বিবিসি