
ভালোবাসা নিছক একটি সম্পর্ক নয়, এটি বিশ্বাসেরও প্রতীক। কিন্তু অনেক সময় কোনো সম্পর্কের কারণে মানুষ এমন তীব্র মানসিক আঘাত বা ট্রমা ভোগ করেন যে পরবর্তীতে আর অন্য কাউকে সহজে বিশ্বাস করতে পারেন না। বিশেষত প্রেমের ক্ষেত্রে এই ভয় আরও গভীর আকার ধারণ করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায়, অন্যের প্রতি বিশ্বাস হারানোর এই তীব্র ভয়কে বলা হয় ‘পিস্ট্যানথ্রোফোবিয়া’।
মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, অতীতের বিশ্বাসঘাতকতা, প্রতারণা বা মানসিক আঘাত থেকে এই ভয় জন্ম নিতে পারে। একবার কেউ যদি সম্পর্কের মধ্যে প্রতারিত হন, তখন তার মনে একটি স্থায়ী সন্দেহ জন্ম নেয়: “আবার যদি একই ঘটনা ঘটে?” এই আশঙ্কা বা ভয়ই পরবর্তীতে নতুন কাউকে বিশ্বাস করতে বাধা দেয়। এটি মনের এক ধরনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে।
এই সমস্যায় আক্রান্ত মানুষদের আচরণে কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষণ দেখা যায়:
- নতুন সম্পর্কে জড়াতে অনিচ্ছুক: তারা নতুন কোনো ঘনিষ্ঠতা স্থাপন করতে সহজে রাজি হন না।
 - কারো কাছে গেলেই অস্বস্তি বোধ করেন এবং নতুন মানুষদের প্রতি অযৌক্তিক সন্দেহ পোষণ করেন।
 - তারা শারীরিক ও মানসিক ঘনিষ্ঠতা এড়িয়ে চলেন।
 - কথোপকথনে এক ধরনের মানসিক দূরত্ব বজায় রাখেন।
 - নিজের আবেগ খোলাখুলি প্রকাশ করতে ভয় পান, এই আশঙ্কায় যে আবার না কষ্ট পেতে হয়।
 
যদিও ‘পিস্ট্যানথ্রোফোবিয়া’ এখনও চিকিৎসাবিজ্ঞানের অফিসিয়াল মানসিক রোগের তালিকায় নেই, তবুও যদি দীর্ঘ সময় ধরে এই ভয়, উদ্বেগ বা এড়িয়ে চলার প্রবণতা থাকে এবং এটি দৈনন্দিন জীবন ও সম্পর্ককে প্রভাবিত করে, তবে অবশ্যই মনোবিদ বা থেরাপিস্টের সাহায্য নেওয়া উচিত।
এই ক্ষেত্রে কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত। এর মাধ্যমে ধীরে ধীরে ব্যক্তি নিজের ভয়কে চিনতে এবং তা মোকাবিলা করতে শিখতে পারেন। প্রয়োজন হলে উদ্বেগ বা হতাশা কমাতে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধও দেওয়া হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলেন, পিস্ট্যানথ্রোফোবিয়া কোনো দুর্বলতার পরিচায়ক নয়; এটি আসলে এক ধরনের মানসিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যা অতীতের আঘাত থেকে মানুষকে রক্ষা করতে চায়।
তবে যদি এই ভয় জীবনের স্বাভাবিক সম্পর্কের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তা ভাঙার চেষ্টা করা জরুরি।
এই ভয়কে জয় করার জন্য সম্মিলিত পদক্ষেপ প্রয়োজন:
- নিজের অনুভূতি খোলাখুলি আলোচনা করা।
 - বন্ধু বা পরিবারের সমর্থন নেওয়া।
 - থেরাপির মাধ্যমে ধীরে ধীরে আবার বিশ্বাস গড়ে তোলা।
 
বিশ্বাস হারানো কষ্টদায়ক, কিন্তু পুনরুদ্ধার অসম্ভব নয়। সময়, ধৈর্য এবং সঠিক মানসিক সহায়তা দিয়ে আবার ভালোবাসায় ভরসা ফিরে পাওয়া সম্ভব।
সূত্র : আজকাল
								
								







