
সকালবেলা বাজারে যাওয়ার পথে রাস্তার মোড়ে ছেলেটিকে প্রায়ই বসে থাকতে দেখি। নাম রফিক, বয়স হবে বারো-তেরো। তার চোখে ক্লান্তি, কাঁধে পুরোনো স্কুলব্যাগ, আর সামনে কিছু শসা-পটল বিছানো। সে বিক্রি করে, কিন্তু পড়ালেখার বই এখনও তার ব্যাগে। অনেকেই অবহেলা করে পাশ কাটিয়ে যায়। কেউ আবার বলে, “এই বয়সে কামলা খাটিস কেন?”
একদিন জিজ্ঞেস করলাম, “পড়িস নাকি?” ছেলেটি মাথা নীচু করে বলল, “পড়ি, সকালে স্কুলে যাই, বিকেলে এখানে বসি।” জানতে পারলাম, তার বাবা কয়েক বছর আগে মারা গেছে। মা গৃহকর্মীর কাজ করেন, আর সে সংসারের বোঝা কমাতে বিক্রিতে বসে।
আমরা যারা সমাজে একটু ভালো আছি, তাদের চোখে এমন দৃশ্য প্রায়ই পড়ে, কিন্তু আমরা কজন দাঁড়াই একটু পাশে? ছেলেটিকে দেখে মনে হলো, স্বপ্ন দেখার ক্ষমতা এখনো তার চোখে মরে যায়নি। একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে সে বলল, “আমি বড় হয়ে অফিসার হবো। মাকে আর কাজ করতে দেবো না।”
তার কথায় আমি থেমে গেলাম। ভাবলাম, সমাজে কত শিশু আছে, যারা জীবনযুদ্ধে একাই লড়ছে। না আছে সাহায্য, না আছে প্রশংসা। অথচ তাদের এই লড়াইই একদিন সমাজের আলো হয়ে উঠতে পারে—যদি আমরা একটু এগিয়ে যাই।
আমি স্থানীয় এক সাংবাদিক বন্ধুর সাথে কথা বললাম। সে রফিকের গল্প নিয়ে ছোট্ট একটি রিপোর্ট ছাপালো। কিছুদিন পর এলাকার কয়েকজন উদার মানুষ মিলে রফিকের পড়াশোনার দায়িত্ব নিলেন। এখন সে বিক্রি করে না, স্কুল শেষে কোচিংয়ে যায়।
আমরা যখন “সমাজ পরিবর্তন” বলি, সেটা শুধুই বড় বড় বক্তৃতা বা পোস্ট দিয়ে হয় না। কখনও কখনও একটি গল্প, একটি হাত বাড়ানোই পারে একটি জীবন বদলে দিতে।
আমরা যদি প্রত্যেকে আমাদের চারপাশের “রফিক”দের একটু চোখে রাখি, তবে এই সমাজ একদিন সত্যিই বদলাবে।