দীর্ঘদিনের ভোগান্তি আর দালালচক্রের দৌরাত্ম্য থেকে মুক্তি মিলছে পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের। পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া বাতিল হওয়ায় দেশে এর সুফল পাওয়া শুরু করেছেন সেবাপ্রত্যাশীরা।। চলতি বছরের মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত মাত্র তিন মাসে ৯ লাখ ৩২ হাজার ৮৬টি পাসপোর্ট ইস্যু করেছে পাসপোর্ট অধিদফতর, যা দেশের পাসপোর্ট ইতিহাসে এক নতুন মাইলফলক।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পুলিশ ভেরিফিকেশন তুলে দেওয়ায় আবেদনকারীরা এখন নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই পাসপোর্ট হাতে পাচ্ছেন। এতে একদিকে যেমন ভোগান্তি কমেছে, তেমনই দালালদের উপর নির্ভরতাও অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। উল্লেখ্য, পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিলের দিন (২১ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত ১ লাখ ৬৯ হাজার ১৩৮টি পাসপোর্ট আটকে ছিল, যা এই সিদ্ধান্তের পর দ্রুত আবেদনকারীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
পাসপোর্ট অধিদফতর সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, মার্চ মাসে ইস্যু করা হয়েছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫৩টি পাসপোর্ট। এপ্রিল মাসে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ লাখ ২২ হাজার ১৩০টিতে। আর মে মাসে সর্বোচ্চ ৩ লাখ ৫২ হাজার ৪২৪টি পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে।
পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল নূরুল আনোয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, "ভেরিফিকেশনের বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে দেওয়ার পর এখন আবেদন করার পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই পাসপোর্ট পেয়ে যাচ্ছেন প্রত্যাশীরা। মাঝখানে তাদের যে সময় লাগতো, সেটি আর লাগছে না, যা সেবাপ্রত্যাশীদের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক।"
সম্প্রতি পাসপোর্ট অধিদফতরে সরেজমিনে গিয়ে অনেক সেবাপ্রত্যাশীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তাদের স্বস্তির কথা। তারা জানান, একজন নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র থাকার পরও পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে হয়রানির শিকার হতে হতো। অনেক সময় পুলিশ অর্থের দাবিও করত। টাকা না দিলে রিপোর্ট দিতে দেরি করত, যার ফলে পাসপোর্ট পেতেও বিলম্ব হতো। এখন আর সেই ঝামেলা নেই। দালালদের কাছে গিয়ে বাড়তি টাকা দেওয়ার প্রয়োজনও ফুরিয়েছে। সরকারের নির্ধারিত ফি জমা দিয়েই সবাই সহজে পাসপোর্ট করতে পারছেন।
এক পাসপোর্ট প্রত্যাশী জানান, "কোনো ঝামেলা বা দালাল ছাড়াই ১০ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট পেলাম। এটি সত্যিই স্বপ্নের মতো।" কীভাবে এত দ্রুত পাসপোর্ট পেলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, "ছবি ও ফিঙ্গার প্রিন্ট দেওয়ার সময় লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে। আর বাদবাকি সব অটো হয়ে গেছে। একজন গ্রাহক হিসেবে আমি তো ১০-১৫ মিনিট লাইনে দাঁড়াতেই পারি। আগের মতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়নি।"
কলামিস্ট ও ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. কুদরাত-ই খুদা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, "পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন তুলে দেওয়ায় নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।"
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের (ডিআইপি) এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, পুলিশ ভেরিফিকেশনের কারণে যথাসময়ে গ্রাহকের পাসপোর্ট ডেলিভারি দিতে বিলম্ব হতো এবং গ্রাহক পাসপোর্ট অফিসকে দোষারোপ করত। কিন্তু এখন পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া সুপার এক্সপ্রেস সার্ভিসের আওতায় যে কোনো প্রয়োজনে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নতুন পাসপোর্ট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কাজী গোলাম তৌসিফ স্বাক্ষরিত পরিপত্র জারি করা হয়। এতে সুস্পষ্টভাবে বলা হয় যে, পুলিশ ভেরিফিকেশন নয়, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের (এনআইডি) ভিত্তিতে আবেদনকারীকে পাসপোর্ট দেবে সরকার।
পরিপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিক এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য পাসপোর্টের নতুন আবেদনের ক্ষেত্রে অনলাইনে যাচাইকৃত জন্মনিবন্ধন সনদের তথ্যের ভিত্তিতে আবেদনকারীকে পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই পাসপোর্ট দেওয়া হবে। পাসপোর্ট পুনঃ ইস্যুর ক্ষেত্রে বিদ্যমান পাসপোর্টের সঙ্গে মৌলিক তথ্যের পরিবর্তন হলে জাতীয় পরিচয়পত্রে প্রদত্ত তথ্য দিয়ে পাসপোর্ট ইস্যু করা যাবে। পাসপোর্ট আবেদনের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র ডেটাবেজ বা জন্মনিবন্ধন ডেটাবেজের সঙ্গে যাচাই করা হলে তা বাংলাদেশ পাসপোর্ট আদেশ ১৯৭৩ এর ৫ (২) ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে প্রয়োজনীয় তদন্ত শেষ হয়েছে বলে গণ্য হবে। এই সাহসী পদক্ষেপটি দেশের পাসপোর্ট সেবায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
সম্পাদক : শাদমান আল আরবী | নির্বাহী সম্পাদক : তানভীর আল আরবী
ঠিকানা : ঝাউতলা, ১ম কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০। ফোন : ০১৩১৬১৮৬৯৪০, ই-মেইল : [email protected], বিজ্ঞাপন: [email protected], নিউজরুম: [email protected] © ২০২৩ রাইজিং কুমিল্লা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Design & Developed by BDIGITIC