জুন ৬, ২০২৫

শুক্রবার ৬ জুন, ২০২৫

পরিবেশ রক্ষায় প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই

ছবি: লেখক

আজ ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। পরিবেশ রক্ষায় জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে ১৯৭৪ সাল থেকে এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। চলতি বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য “প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই”। মূলত প্লাস্টিক বর্জ্যনিরুপণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষা ও মানবস্বাস্থ্যে প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব হ্রাস করাই পরিবেশ দিবস ২০২৫ এর মূল লক্ষ্য।

বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়, যার অধিকাংশ সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে পরিবেশের বিভিন্ন অংশে জড়ো হয়ে দূষণ ঘটাচ্ছে। বাংলাদেশেও প্লাস্টিক দূষণ পরিবেশ দূষণের প্রধান অন্তরায়। ২০২৪ সালের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে বছরে ৮৭,০০০ টন একক ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদিত হয় যার অধিকাংশই (৯৬%) সরাসরি আবর্জনা হিসেবে ফেলে দেওয়া হয়। এসব বর্জ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে প্লাস্টিক বোতল, চিপসের প্যাকেট, পলিথিন, একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক প্লেট ও গ্লাস ইত্যাদি।

যত্রতত্র আবর্জনা ফেলার কারণে এসব প্লাস্টিক পণ্য সহজেই নদী-নালা, খাল ও মাটিতে জমা হচ্ছে। প্লাস্টিকের অপচনশীল ধর্মের কারণে এরা পরিবেশে থেকে যায় বছরের পর বছর। ফলস্বরুপ, এরা মাটি ও পানি দূষণে যেমন ভূমিকা রাখছে, তেমনি বাস্তুতন্ত্র ও খাদ্যশৃঙ্খলকেও প্রভাবিত করছে। প্লাস্টিক দূষণের কারণে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনসহ বঙ্গোপসাগরের জীববৈচিত্র্যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে, যা আমাদের জন্য অশনিসংকেত। দৈনন্দিন জীবনে অত্যধিক প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার ও অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দরুন আমাদের কৃষিজমির উর্বরতা দিনদিন কমছে। ফলে খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে, পাশাপাশি খাদ্যের চাহিদা মেটানোর জন্য আমদানি নির্ভরতা বাড়ছে।

অন্যদিকে খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণ, মোড়কজাতকরণ ও পরিবেশনে প্লাস্টিক পণ্যের উর্ধ্বগামী ব্যবহারের ফলে মানবদেহে মাইক্রোপ্লাস্টিক জমা হচ্ছে যা ক্যান্সার, কিডনী রোগ ও লিভার সিরোসিসসহ বিভিন্ন জটিল রোগ সৃষ্টি করে।

এমতাবস্থায় প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঠিক প্রয়োগ এখন সময়ের দাবি। বাংলাদেশ প্লাস্টিক বর্জ্য নীতি অনুযায়ী টেকসই প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনার জন্য জাতীয় কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে, যেখানে ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০% প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার, ২০২৬ সালে একক ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার ৯০% হ্রাস ও ২০৩০ সালের মধ্যে প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ৩০% হ্রাস করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে প্লাস্টিক দূষণ নিরুপণে জনসচেতনতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খাবার পরিবেশনে প্লাস্টিক পণ্যের পরিবর্তে কাগজ বা পাতার তৈরি প্লেট ও গ্লাস ব্যবহার, পণ্য পরিবহনে কাপড়/পাটের ব্যাগের ব্যবহার, ব্যবহারের পর নির্দিষ্ট স্থানে প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলার মত ছোট ছোট পদক্ষেপগুলো আমাদেরকে প্লাস্টিক দূষণের হাত থেকে সহজেই রক্ষা করতে পারে।

প্রযুক্তির ঊৎকর্ষতাকে ব্যবহার করে পচনশীল তন্তর ব্যাগ তৈরি করে পলিথিনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে, যা একই সাথে পরিবেশবান্ধব ও ব্যবহার উপযোগী।

পরিবেশ সুরক্ষায় ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সমাজ, রাষ্ট্রসহ আমাদের সকলকেই যার যার অবস্থান থেকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। মনে রাখতে হবে পৃথিবীতে মানুষ তথা সকল জীবের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য আগে আমাদের পরিবেশকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

লেখক: সহকারী শিক্ষক, দেবিদ্বার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, দেবিদ্বার, কুমিল্লা।

আরও পড়ুন