শুক্রবার ৮ আগস্ট, ২০২৫

নোয়াখালীতে বিএনপি নেতা আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেপ্তার, পরিবারের দাবি ফাঁসানোর অভিযোগ

ছবি: প্রতিনিধি

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরবাটা ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক মিজান মাঝিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে হাত-পা ও চোখ বেঁধে তুলে নেওয়ার প্রতিবাদে এবং তাঁর মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীরা।

শুক্রবার ( ৮ আগস্ট) দুপুরে উপজেলার ভূঁইয়ার হাট বাজারে এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) দিবাগত গভীর রাতে আবু বক্কর সিদ্দিক মিজান মাঝিকে তাঁর নিজ বসত ঘর থেকে কোস্ট গার্ডের সদস্যরা তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠে।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, ভূঁইয়ার হাট বাজার ব্যবসায়ী পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা, ব্যবসায়ী আহসান উল্ল্যাহ, আবুল খায়ের, আব্দুল করিম প্রমূখ।

এসময় বক্তারা বলেন, আবু বক্কর সিদ্দিক মিজান মাঝি বিএনপির রাজনৈতিক নেতার পাশাপাশি একজন সফল ও সৎ ব্যবসায়ী। ভূঁইয়ার হাট বাজার, হাতিয়ার চেয়ারম্যান ঘাট, বাংলা বাজার’সহ এই অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় তাঁর মৎস্য, হার্ডওয়ার, টিন ও ইলেক্ট্রনিকস ব্যবসা রযেছে। এই অঞ্চলের মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে তাঁর যথেষ্ট দান-অনুদান রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে কোন ধরনের দাঙ্গা-হাঙ্গামা অথবা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কোন অভিযোগ নেই। থানায় কোন মামলা নেই। অথচ গতরাতে মিজান মাঝি ঘরের দরজা ভেঙে তাঁর হাত-পা, চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে যায় কোস্টগার্ডের সদস্যরা। অবিলম্বে আবু বক্কর সিদ্দিক মিজান মাঝির নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন স্থানীয় এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীরা।

আবু বক্কর সিদ্দিক মিজান মাঝির স্ত্রী আফরোজা বেগম অভিযোগ করে বলেন, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২ টা ৪০ মিনিটে কিছু ৩০-৩৫জন লোক তাদের ঘরের ৩টা দরজা ভেঙে ভিতরে ডুকেন। এসময় তারা নিজেদের কোস্টগার্ড পরিচয় দিয়ে তাঁর স্বামী মিজান মাঝির হাত-পা ও চোখ বেঁধে ফেলেন এবং তাদের ঘরের সমস্ত মালামাল ভেঙে-চুড়ে তসনছ করেন এবং মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নেন। পরে তারা তাঁর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে তাদের ঘরে কোন মালামাল লুট হয়নি ও তাদের কোন ক্ষতি করা হয়নি মর্মে মুঠোফোনে তাঁর কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করেন। পরে কোস্টগার্ড সদস্যরা তাঁর স্বামীকে তুলে নিয়ে যান।

মিজান মাঝির ছেলে শাহাদাত হোসেন রুবেল বলেন, তাঁর বাবা চরবাটা ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ইতিপূর্বে তারঁ বাবার বিরুদ্ধে চরজব্বর থানা অথবা অন্য কোথাও কোন মামলা বা অভিযোগ নেই। অথচ রাজনীতি ও ব্যবসায়িক কারণে তাঁর বাবার বিরুদ্ধে কিছু লোক শত্রুতা করছে। তারা কোস্টগার্ডকে দিয়ে তাঁর বাবাকে তুলে নিয়ে গেছেন।

তিনি বলেন, তাঁর বাবা মিজান মাঝিকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৩টায় নিয়ে গেলেও শুক্রবার দুপুর ২ টা পর্যন্ত থানায় হস্তান্তর না করে অস্ত্র উদ্ধারের নামে নাটক সাজিয়ে অস্ত্র, ডাকাতিসহ বিভিন্ন খারাপ মামলায় জড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে শুনছেন। অভিলম্বে তিনি তাঁর বাবা মিজান মাঝির নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।

চরজব্বর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন মিয়া বলেন, মিজান মাঝিকে আটক বা অভিযানের বিষয়ে কোস্টগার্ড আমাদেরকে কিছুই জানাননি। রাতে মিজান মাঝির পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি আমাদের জানানোর পর পুলিশ ওখানে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেছে। তিনি বলেন, কোস্টগার্ডের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আছে কিনা তা আমাদের জানা নেই। তবে আমাদের থানায় তাঁর বিরুদ্ধে কোন মামলা নাই।

এদিকে শুক্রবার বিকেলে, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড মিডিয়া কর্মকতা লেঃ কমান্ডার বিএন মো. সিয়াম-উল-হক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছেন, নোয়াখালীর হাতিয়ার বাংলা বাজার মাছ ঘাটে আবু বক্কর সিদ্দিক ওরপে মিজান ডাকাত (৪৫) এর মাছের আড়তে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র এবং দেশীয় অস্ত্র রয়েছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে আবু বক্কর সিদ্দিক ওরপে মিজান ডাকাতকে আটক করা হয়।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো আরও জানানো হয়, আবু বক্কর সিদ্দিক ওরপে মিজানের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তাকে সঙ্গে নিয়ে বাংলা বাজার বিসমিল্লাহ মৎস্য আড়ত তল্লাশি করে ৯টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, ২ রাউন্ড তাজা কার্তুজ, ১ রাউন্ড ফাঁকা কার্তুজ ও ৩টি দেশীয় অস্ত্র এবং ২৯টি হাত বোমা জব্দ করা হয়। আটককৃত ডাকাত ও জব্দকৃত সকল আলামতসহ তার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।

আরও পড়ুন