ডিসেম্বর ২১, ২০২৪

শনিবার ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪

নির্বাচন আয়োজনের পর কি করবেন ড. ইউনূস, জানালেন নিজেই

Rising Cumilla - Muhammad Yunus
ছবি : সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, ‘ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের পর নিজের নিয়মিত কাজে ফিরে যাবেন।’

গতকাল শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানান তিনি।

১৫ বছরের স্বৈরাচার সরকারের পতন হওয়ায় সম্প্রতি ইকোনমিস্টের কান্ট্রি অব দ্য ইয়ার খেতাব জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ। এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎকারটি নেয় সাময়িকীটি।

ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন সংস্কার কাজে হাত দিয়েছে। বিএনপিসহ বেশ কিছু দল যতটুকু সম্ভব সংস্কার শেষ করে দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে।

কিছুদিন আগে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচনের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন হলে এই সময়ের মধ্যে নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে পূর্ণ সমর্থন দেওয়া হবে। এরপর জাতিসংঘ সদর দফতরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিভার সঙ্গে বৈঠকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, চলমান সংস্কার কাজ শেষে এবং একটি পূর্ণাঙ্গ ভোটার তালিকার কাজ সম্পন্ন হলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিন জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে ২০২৫ সালের শেষ দিকে অথবা ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা।

সেদিন তিনি বলেছিলেন, যদি অল্প কিছু সংস্কার করে ভোটার তালিকা নির্ভুলভাবে তৈরি করার ভিত্তিতে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয় তাহলে ২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়তো সম্ভব হবে। আর যদি এর সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রত্যাশিত মাত্রার সংস্কার যোগ করি তাহলে আরও অন্তত ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে। মোটাদাগে বলা যায়, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়।

২০২৫ সালে নির্বাচন আয়োজনের পর কী করবেন ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের এমন প্রশ্নের জবাবে গতকাল প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমার চাকরি আসলে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমাকে জোর করে এ কাজে আনা হয়েছে। আমি আমার কাজ করছিলাম এবং তা উপভোগ করছিলাম। এজন্য আমি প্যারিসে ছিলাম। সেখান থেকে আমাকে টেনে আনা হয়েছে অন্য কিছু করার জন্য। সুতরাং আমি আমার নিয়মিত কাজে ফিরে যেতে পারলে খুশি হব, যা আমি আমার সারাজীবন ধরে করেছি। আর তরুণরাও এটিকে ভালোবাসে। সুতরাং আমি আমার সেই দলে বা আন্দোলনে ফিরে যাব যেটা আমি সারা বিশ্বে তৈরি করেছি।’

বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের ঝুঁকি সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি আশ্বস্ত করছি যে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দেবে না। তরুণেরা ধর্ম নিয়ে নিরপেক্ষ। তারা নতুন বাংলাদেশ গড়তে চায়। এই তরুণরা পুরো বিশ্ব পরিবর্তন করতে পারে। এটা শুধু এক দেশ বা আরেকটি দেশ পরিবর্তনের বিষয় না। বাংলাদেশ যা করেছে এটি একটি উদাহরণ যে তরুণরা কত শক্তিশালী। আমাদের উচিত তাদের প্রতি মনোযোগ দেওয়া। বিশেষ করে তরুণীদের ওপর। তারা বাংলাদেশের অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আমাদের উচিত তরুণ-তরুণীদের ওপর মনোযোগ দেওয়া যাতে তারা নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে। তাদের সুযোগ এসেছে। তাদের সক্ষমতাও রয়েছে। অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তিন তরুণ আমার ক্যাবিনেটে আছেন। তারা দুর্দান্ত কাজ করছে। তারা সক্ষম। এই তরুণরা গত শতাব্দীর তরুণ নয়। তারা এই শতাব্দীর তরুণ। তারা অন্যান্যদের মতোই সক্ষম।’