আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর মিরপুরে যে আনন্দ মিছিল হয়, তাতে অংশ নিয়েছিলেন তামিম হোসেন। একপর্যায়ে মিছিলে পুলিশ গুলি ছুড়লে একটি গুলি এসে পায়ে লাগে তার।
‘আমার এখনও মনে হয় আমার পা আগের মতোই আছে। এটা যে কেটে ফেলে দেওয়া হয়েছে, এটা যে নাই সেটা মনেই থাকে না। আমি পুরো পায়ের অনুভূতি আগের মতোই পাই।’
গতকাল শুক্রবার (৬ আগস্ট) হাসপাতালের বিছানায় বসে গণমাধ্যমে কথাগুলো বলছিলেন ১৫ বছর বয়সী কিশোর তামিম হোসেন। গত ৫ আগস্ট বিকেলের দিকে ঢাকার মিরপুরে গুলিবিদ্ধ হন তিনি।
ঢাকার তামিম হোসেন পড়তেন একটি হাফেজি মাদরাসায়। চলতি বছর মাদরাসা থেকে ভর্তি হয়েছিলেন একটি মাধ্যমিক স্কুলের অষ্টম শ্রেণিতে।
গুলি তার ডান পায়ের পেছনের অংশে ঢুকে বেরিয়ে যায়। তামিম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গুলি লাগার সঙ্গে সঙ্গে আমি রাস্তায় পড়ে যাই। পুরো ডান পা অবশ হয়ে যায়। রক্ত আর রক্ত। হাঁটতে পারছিলাম না সহজে। ওই অবস্থাতেই গুলি থেকে বাঁচতে আশ্রয় নিই রাস্তার ফ্লাইওভারে। আধাঘণ্টা পর গুলি থামলে নেমে আসি। পরে মানুষজন আমাকে হাসপাতালে নেই।’
সেদিন মিরপুরের একটি হাসপাতাল ঘুরে তার আশ্রয় হয় পঙ্গু হাসাপাতালে। সেখান থেকে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে।
তামিম বলেন, ‘কিছুদিন ড্রেসিং করি। কিন্তু আস্তে আস্তে জায়গাটা পচে যায়। তখন পঙ্গু থেকে আমাকে হৃদরোগে পাঠায়। সেখানে টেস্ট করার পর তারা বলে যে, পা রাখা যাবে না। এটা কেটে ফেলতে হবে। পরে পঙ্গুতে আবারও ডাক্তাররা দেখে। তারা বলে যে, পা রাখার আর কোনো সুযোগ নেই।’
তামিমের পা কেটে ফেলার পর নতুন জটিলতা শুরু হয়। পা বিহীন অবস্থার সঙ্গে কিছুতেই মানিয়ে নিতে পারছিলেন না তামিম।
অপারেশনের তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। কিন্তু পা হারিয়েও পা থাকার ‘অদ্ভূত’ অনুভূতি এখনও বয়ে চলেছেন অষ্টম শ্রেণির এই শিক্ষার্থী।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রথম তিন-চার দিন আমি ঘুমাতে পারি নাই। আমার মনে হতো যে, পুরো পা আমার অক্ষত আছে। পায়ে যেখানে গুলি লেগেছিল, সেখানকার ব্যথা আমি এখনও অনুভব করি। অথচ সেই পা কেটে ফেলা হয়েছে। মাঝে মাঝে চুলকায়। চুলকাতে গিয়ে দেখি পা নেই। আমার যখন পা ছিল, তখন যে অনুভব করতাম যে মশা কামড় দিয়েছে বা পিঁপড়া কামড় দিয়েছে, ওই রকমের অনুভব হয়। আমার পা চুলকাতে থাকে। পিঁপড়া কামড় দেয়। কিন্তু আসলে কিছু নেই।’
তামিম এখন অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্টা করছেন নতুন জীবনে। কিন্তু তার জীবনধারা যে আজীবনের জন্য বদলে গেছে, বুঝতে পারছেন সেটাও। তিনি বলেন, ‘আমি এখন ক্রাচে ভর করে হাঁটার চেষ্টা করছি। আমি ফুটবল খেলতাম। সেগুলো মনে পড়ে। আমার বন্ধুরা খেলবে। কিন্তু আমি খেলতে পারবো না -এগুলো মনে হয়। আমার আম্মু বলে, ডাক্তার তোমার পা লাগায় দেবে তুমি খেলতে পারবা।’
তবে পরিস্থিতি যেমনই হোক, ভবিষ্যৎ নিয়ে হাল ছাড়ছেন না তামিম। স্বপ্ন দেখছেন, ইঞ্জিনিয়ার হবেন।
তামিম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আবু সাঈদ ভাই মারা গেছে। অনেকেই আহত হয়েছেন। আমিও বসে থাকতে পারিনি। আমার আম্মু নিষেধ করেছিলো, কিন্তু আমি শুনি নাই। এখন ভাবি, আমি তো নিজেই সাহস করে আন্দোলনে গিয়েছি। নিজের একটা অঙ্গ গিয়েছে, আফসোস নাই। তবু দেশটা যেন ভালো থাকে।
সম্পাদক : শাদমান আল আরবী | নির্বাহী সম্পাদক : তানভীর আল আরবী
ঠিকানা : ঝাউতলা, ১ম কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০। ফোন : ০১৩১৬১৮৬৯৪০, ই-মেইল : [email protected], বিজ্ঞাপন: [email protected], নিউজরুম: [email protected] © ২০২৩ রাইজিং কুমিল্লা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Design & Developed by BDIGITIC