ধর্ষণের শিকার নারীদের শারীরিক পরীক্ষায় ‘টু ফিঙ্গার’ (দুই আঙুলের পরীক্ষা) পদ্ধতি অবৈজ্ঞানিক ও অনির্ভরযোগ্য অভিহিত করে তা নিষিদ্ধ ঘোষণাসহ কয়েকদফা নির্দেশনা দিয়ে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে অন্যতম রিট আবেদনকারী সংগঠন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এ তথ্য জানিয়েছে।
বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি এ কে এম সাহিদুল হকের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ এক রিটের চুড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল কয়েক দফা নির্দেশনাসহ এ রায় দেন।
এসব নির্দেশনায় বলা হয়,
১. ধর্ষণের শিকার নারীর ক্ষেত্রে দুই আঙুলের পরীক্ষা অবৈজ্ঞানিক, অনির্ভরযোগ্য এবং অবৈধ। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুই আঙুলের পরীক্ষা নিষিদ্ধ।
২. রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ হেলথ রেসপনস টু জেন্ডার বেজড ভায়োলেন্স—প্রটোকল টু হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারে প্রটোকলটি সব ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ, ফিজিশিয়ান—যারা ধর্ষণের শিকার নারীর ডাক্তারি (মেডিকো-লিগ্যাল) পরীক্ষা করেন, পুলিশ কর্মকর্তা—যারা ধর্ষণের মামলার তদন্ত করেন এবং নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের মামলার সরকারি প্রসিকিউটর এবং আইনজীবীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে।
৩. ডাক্তাররা ধর্ষণের শিকার নারীর ডাক্তারি (মেডিকো-লিগ্যাল) পরীক্ষার সনদে ধর্ষণের বিষয়ে মতামত দেবেন, কিন্তু কোনোভাবেই অমর্যাদাকর শব্দ, যেমন- ‘অভ্যাসগতভাবে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত’ ব্যবহার করতে পারবেন না। ধর্ষণের শিকার নারীকে তার অতীতের যৌন সম্পর্ক সম্পর্কে কোনও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন না।
৪. ধর্ষণের শিকার নারীর যৌনাঙ্গে কোনও গভীর ক্ষত পরীক্ষার জন্য গাইনি বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠাতে হবে।
৫. কোনও শিশু বা কিশোরী মেয়ের ক্ষেত্রে পার স্পেকুলাম এক্সামিনেশন পরীক্ষা করা যাবে না, যদি না কোনও বাহ্যিক আঘাতের চিহ্ন থাকে।
৬. বায়ো ম্যানুয়াল পরীক্ষার সঙ্গে দুই আঙুলের পরীক্ষার কোনও সম্পর্ক নেই। এটি একটি গাইনি পরীক্ষা এবং ধর্ষণের শিকার নারীর ক্ষেত্রে এ পরীক্ষা করা যাবে না।
৭. ধর্ষণের শিকার নারীর ডাক্তারি (মেডিকো-লিগ্যাল) পরীক্ষার জন্য প্রশিক্ষিত ডাক্তার ও সেবিকাদের নিয়োগ করতে হবে। এ পরীক্ষার সময়ে সুবিধা অনুযায়ী—নারী পুলিশ, একজন নারী আত্মীয়ের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে এবং সুবিধা অনুযায়ী একজন নারী ডাক্তার দিয়ে পরীক্ষা করতে হবে। কর্তব্যরত ডাক্তার এবং ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা এ পরীক্ষার ক্ষেত্রে ধর্ষণের শিকার নারীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করবেন।
৮. নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল বিষয়টি নিশ্চিত করবে যে আদালতে ধর্ষণের শিকার নারীকে জিজ্ঞাসাবাদে তার মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে—এমন কোনও প্রশ্ন আইনজীবী করবেন না।
এর আগে ২০১৩ সালের ৮ অক্টোবর মানবাধিকার সংগঠন আইন ও শালিস কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ব্র্যাক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, নারীপক্ষ নামে ৬টি পৃথক সংগঠন এবং দুজন ব্যক্তি ধর্ষণের শিকার নারীর ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কিনা, এই বিষয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করেন।