
দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত। আর সেই ভাতের মাধ্যমেই দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)। সংস্থাটি উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ বোরো মৌসুমের নতুন একটি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ব্রি-ধান ১০৭’।
ব্রি’র বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই নতুন উদ্ভাবিত ধান শুধু উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধই নয়, এটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যামাইলোজও রয়েছে। ফলে, এই ধানের চালের ভাত খেলে মানব শরীর প্রয়োজনীয় প্রোটিনের একটি বড় অংশ পাবে।
কৃষকদের মাঝে নতুন এই ধানের জাতটি বেশ আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। চলতি বছর গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে গোপালগঞ্জ, নড়াইল ও বাগেরহাট জেলার ২০ জন কৃষক ২০টি প্রদর্শনী প্লটে ‘ব্রি-ধান ১০৭’-এর চাষাবাদ করেন। কৃষকরা জানিয়েছেন, এই ধান চাষে তারা বেশ লাভবান হয়েছেন। অন্যান্য প্রচলিত ধানের তুলনায় এর ফলন বেশি এবং বাজারে দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মাঠ পর্যায়ে সারাদেশে চাষাবাদের জন্য ২০২৪ সালে ‘ব্রি ধান-১০৭’ অবমুক্ত করা হয়। এই ধানের চালে অ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৯ দশমিক ৩ এবং প্রোটিনের পরিমাণ ১০ দশমিক ২ ভাগ। এটি একটি উচ্চ ফলনশীল বোরো মৌসুমের জাত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই জাতের ধানে রোগবালাই ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ অন্যান্য জাতের তুলনায় অনেক কম দেখা যায়।
ধানটির জীবনকাল ১৪৮ দিন এবং এটি হেক্টর প্রতি ৮ দশমিক ১৯ থেকে ৯ দশমিক ৫৭ মেট্রিক টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। গোপালগঞ্জের মাঠের কৃষকরা জানিয়েছেন, তারা হেক্টর প্রতি গড়ে ৮ দশমিক ৭৫ মেট্রিক টন ফলন পেয়েছেন।
কোটালীপাড়া উপজেলার কৃষক জেভিয়ার হালদার বাসসকে জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতা ও নির্দেশনায় ৫২ শতাংশ জমিতে তিনি ‘ব্রি ধান -১০৭’ বপন করেছিলেন। ধান কাটার পর মেপে দেখা গেছে, অন্যান্য ধানের চেয়ে এর উৎপাদন অনেক বেশি। তিনি এই ধান চাষ করে লাভবান হয়েছেন এবং বাজারেও এর ভালো দাম পাচ্ছেন। তার মতো আরও অনেক কৃষক আগামী বছর এই জাতের ধান চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
কোটালীপাড়া উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মনোজ কুমার মৃধা জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এই জাতের ধান আবাদের সম্প্রসারণে কাজ করবে। এর মাধ্যমে দেশ খাদ্য উৎপাদনে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে।
গোপালগঞ্জ ব্রি’র আঞ্চলিক কার্যালয়ের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আমিনা খাতুন মনে করেন, এই ধান স্থানীয় কৃষিকে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত করতে সহায়ক হবে। পাশাপাশি, দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর পুষ্টিহীনতা দূর করতেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সূত্র: বাসস