
সাম্প্রতিক সময়ে দীর্ঘস্থায়ী বা পুরনো কাশির সমস্যায় ভোগা মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। সারাজীবন কাশির ওষুধ সেবন করে কাটানোটা অনেকের জন্যই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এই পরিস্থিতিতে অতীতে মা ও দাদিরা নানা ধরনের ঘরোয়া টোটকার সাহায্য নিতেন। এমন একটি প্রচলিত লোকচিকিৎসা হলো, পান পাতা পুড়িয়ে তার ছাই (ভস্ম) মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া। অনেকের বাড়িতে এই পদ্ধতিটি দীর্ঘস্থায়ী কাশির উপশমের জন্য মানা হতো।
চলুন, এই টোটকাটির মূল উপাদান পান পাতা ও মধুর পরিচিত ঔষধি গুণাগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
পান পাতার পরিচিত ঔষধি গুণ
পান পাতা শুধু মুখশুদ্ধি নয়, এর রয়েছে দারুণ ঔষধি গুণাগুণ, যা কাশি উপশমে সহায়তা করে।
কফ নিরোধক গুণ: আয়ুর্বেদ এবং ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসায় পান পাতা দীর্ঘদিন ধরে কাশি ও ব্রঙ্কাইটিসের মতো শ্বাসতন্ত্রের সমস্যায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর অন্যতম প্রধান গুণ হলো কফ নিরোধক ক্ষমতা, যা ফুসফুস ও শ্বাসনালী থেকে কফ বা শ্লেষ্মা দূর করতে সাহায্য করে।
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ও প্রদাহ-বিরোধী: পান পাতায় এমন কিছু যৌগ থাকে যা ক্ষতিকারক জীবাণু দূর করতে সক্ষম। একইসঙ্গে, এটি গলার ভেতরের প্রদাহ বা জ্বালা কমাতে সাহায্য করে, যা কাশির অন্যতম কারণ।
মধুর কার্যকারিতা: বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রমাণিত
কাশির চিকিৎসায় মধুর কার্যকারিতা আধুনিক বিজ্ঞানেও স্বীকৃত এবং প্রমাণিত। এর ঔষধি গুণগুলি নিম্নরূপ:
প্রাকৃতিক কাশি দমনকারী : মধু একটি অত্যন্ত কার্যকরী প্রাকৃতিক কাশি দমনকারী হিসেবে কাজ করে। এর ঘন ও সান্দ্রতাযুক্ত গঠন গলার স্ফীত (ফোলা) টিস্যুর উপর একটি প্রতিরক্ষামূলক স্তর তৈরি করে। এই স্তরটি গলার জ্বালা কমাতে সাহায্য করে এবং কাশির তাগিদকে প্রশমিত করে।
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণ: মধুতে প্রাকৃতিক অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি গলা বা শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে, যা অনেক সময় দীর্ঘস্থায়ী কাশির কারণ হয়।
পান পাতার ভস্ম তৈরির প্রচলিত ধারণা
পান পাতা পুড়িয়ে সেটার ছাই বা ভস্ম তৈরি করে তা সেবনের নির্দিষ্ট কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি বা স্বীকৃত আধুনিক ব্যবহার নেই। তবে, ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি ও লোকবিশ্বাসে মনে করা হয়, পাতা পোড়ানোর ফলে এর কিছু বিশেষ উপাদান ঘনীভূত বা পরিবর্তিত হয়, যা ঔষধি গুণকে আরও বেশি কার্যকর করে তুলতে পারে। অর্থাৎ, এই ভস্ম তৈরি করাটা কার্যকারিতা বৃদ্ধির একটি প্রচলিত উপায় হিসেবে গণ্য হতো।
সূত্র : টিভি৯ বাংলা