শনিবার ১৯ জুলাই, ২০২৫

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ‘ভালো মশা’য় মিলতে পারে সমাধানের পথ

Rising Cumilla -'Good mosquitoes' may be the solution to dengue control
ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বজুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ যখন জনস্বাস্থ্যের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ, তখন বিজ্ঞানীরা নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন এর মোকাবিলার নতুন উপায় খুঁজতে। সম্প্রতি প্রকাশিত কিছু আন্তর্জাতিক গবেষণার ফলাফল ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে, বিশেষ করে ডেঙ্গু ভাইরাসের নতুন ধরন, এর বিস্তারের কারণ এবং প্রতিরোধে আধুনিক পদ্ধতির ব্যবহার নিয়ে উঠে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

সাম্প্রতিক গবেষণায় ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের পেছনের প্রধান কারণগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে: ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার সংখ্যা বৃদ্ধি, উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়াজনিত জলবায়ু পরিবর্তন, মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাব, অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং ভাইরাস সেরোটাইপের পরিবর্তন। ২০২৩ সালে বাংলাদেশে ডেঙ্গুর রেকর্ড সংখ্যক সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে, যেখানে নতুন সেরোটাইপ (যেমন ডিইএনভি-৪) এর ভূমিকাও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আন্তর্জাতিকভাবেও একই ধরনের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

তবে, সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক খবর হলো ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ‘উলবাকিয়া’ নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত ‘ভালো মশা’ ব্যবহারের গবেষণা। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) এবং অস্ট্রেলিয়ার কিউআইএমআর বার্গহোফার মেডিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা যৌথভাবে উলবাকিয়াবাহী এডিস ইজিপ্টি মশা সফলভাবে তৈরি করেছেন। এই উলবাকিয়া ব্যাকটেরিয়া এডিস মশার দেহে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করতে সক্ষম। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এটি মানুষ বা পরিবেশের কোনো ক্ষতি করে না। গবেষণায় দেখা গেছে, উলবাকিয়াযুক্ত মশা ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষমতা ৯২.৭ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে।

এই পদ্ধতির কার্যকারিতা ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে বিশ্বজুড়ে। অস্ট্রেলিয়াতে এই প্রতিস্থাপন কৌশল ব্যবহার করে গত দশকে ডেঙ্গু রোগ ৯৬ শতাংশ কমেছে। ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাষ্ট্রেও এই পদ্ধতিতে ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত সফলতা দেখা গেছে। এই সাফল্য ডেঙ্গু মোকাবিলায় একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং নিবিড় পরিচর্যা (ICU) এর প্রয়োজনীয়তা নিয়েও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা জোর দিচ্ছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনার জন্য বিভিন্ন দেশকে সহায়তা করছে এবং ডেঙ্গু টিকা তৈরি ও বিতরণেও কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় (ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তথ্য ব্যবহার করে) উঠে এসেছে যে, গর্ভবতী নারীরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে তাদের প্রসব জটিলতা এবং মৃত সন্তান প্রসবের হার বেশি থাকে। এই তথ্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার উপর আরও বেশি গুরুত্ব আরোপের ইঙ্গিত দেয়, বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য।

ডেঙ্গু জ্বর বিশ্বজুড়ে একটি প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যা, বিশেষ করে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলে এর প্রকোপ বেশি। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ডেঙ্গুর ভৌগোলিক বিস্তার ও প্রাদুর্ভাব বাড়ছে, কারণ উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া মশার প্রজনন ও জীবনচক্রের জন্য অনুকূল। বাংলাদেশ প্রতি বছরই ডেঙ্গুর মারাত্মক প্রকোপের মুখোমুখি হয়, বিশেষ করে বর্ষাকালে।

এই প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক গবেষণাগুলো ডেঙ্গু মোকাবিলার নতুন পথ দেখাচ্ছে, যা স্থানীয় এবং বৈশ্বিক উভয় স্তরেই প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনার কৌশল নির্ধারণে সহায়ক হবে।

আরও পড়ুন