রাজধানী ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জুলাই গণহত্যার বিচার, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিতকরণ এবং মৌলিক সংস্কারের দাবিসহ সাত দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশে আজ নেতাকর্মীদের ঢল নেমেছে। সমাবেশ ঘিরে শুক্রবার রাত থেকেই সমাবেশস্থলে জড়ো হতে শুরু করেছেন দলটির বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীরা।
সমাবেশে অংশ নিতে সারা দেশ থেকে প্রায় ১০ লাখ নেতাকর্মীর উপস্থিতি আশা করছে দলটি।
শনিবার (১৯ জুলাই) সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতের সমাবেশ মঞ্চে কুরআন তেলাওয়াত দিয়ে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা।
জামায়াতের ৭ দফা দাবিগুলো হল:
১. ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ও অন্যান্য সময় সংঘটিত সকল গণহত্যার বিচার
২. রাষ্ট্রের সব স্তরে প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার
৩. ঐতিহাসিক জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রের পূর্ণ বাস্তবায়ন
৪. জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন
৫. জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে পিআর (প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন
৬. প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ
৭. রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের জন্য সমান সুযোগ ও ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিতকরণ।
সমাবেশের আনুষ্ঠানিকতা দুপুরে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ভোর থেকে দলে দলে সমাবেশস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসতে শুরু করেছেন নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। গতকাল শুক্রবার রাতেও অনেক নেতাকর্মী সোহরাওয়ার্দীতে জড়ো হন।
অনেক নেতাকর্মী ইতিমধ্যে মঞ্চের সামনে এসে পৌঁছেছেন। তাদের কেউ জামায়াতের লোগোসংবলিত টি-শার্ট পরেছেন, কারও মাথায় বাঁধা দলীয় ফিতা। অনেকে হাতে এনেছেন দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল ১০টায় কোরআন পাঠ হবে। এরপর হামদ ও নাত পরিবেশন করা হবে। মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে দুপুর ২টায়।
এ উপলক্ষে দলটির নেতাকর্মীদের জন্য একাধিক নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ও জাতীয় সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মিয়া গোলাম পরওয়ার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়।
নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে:
১. সবাইকে সমাবেশস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পৌঁছানোর চেষ্টা করা ও মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ করা।
২. আমিরে জামায়াতের বক্তব্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি নিজস্ব স্থান থেকে সরবেন না।
৩. বৃষ্টি হলেও যার যার অবস্থানে বসে থাকতে হবে।
৪. জাতীয় পতাকা ব্যতীত ভিন্ন কোনো পতাকা প্রদর্শন করা যাবে না।
৫. মিছিল নিয়ে আসার ক্ষেত্রে ক্রিয়াশীল কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া যাবে না।
৬. যাতায়াত ও সমাবেশস্থলে বয়স্ক ও শিশুদের (যদি আসে) অগ্রাধিকার দেওয়া।
৭. সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চারপাশে ১৫টি মেডিকেল বুথ ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার থাকবেন। কোনো ব্যক্তি অসুস্থ হলে পার্শ্ববর্তী মেডিকেল বুথ থেকে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে পারবেন।
৮. অভ্যর্থনা কেন্দ্র ও সমাবেশস্থলে আমাদের পোশাকধারী স্বেচ্ছাসেবক থাকবে। শৃঙ্খলার স্বার্থে তাদের নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।
৯. প্রত্যেকে সম্ভব হলে চাহিদামতো খাবার পানির বোতল সংগ্রহে রাখবেন।
১০. সমাবেশের কার্যক্রম শেষ হলে দ্রুত সময়ে সভাস্থল ত্যাগ করা।
আগত গাড়িসংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা হয়েছে:
১. প্রত্যেক গাড়ির সামনের দিকে নির্দিষ্ট তথ্যসহ স্টিকার লাগানো। যেখানে অঞ্চলের নাম, ড্রপিং পয়েন্ট, পার্কিং প্লেস, ড্রাইভারের নাম ও মোবাইল নম্বর, সংশ্লিষ্ট গাড়ির দায়িত্বশীলের নাম ও মোবাইল নম্বর লেখা থাকবে।
২. প্রত্যেক শাখা থেকে আগত গাড়িগুলো যতদূর সম্ভব একসঙ্গে রওনা করবে।
৩. ঢাকার ফ্লাইওভারে কোনো গাড়ি উঠবে না।
৪. গাড়িগুলো নির্দিষ্ট ড্রপিং পয়েন্টে ড্রপ করা এবং নির্ধারিত পার্কিং এরিয়ায় পার্কিং নিশ্চিত করা।
৫. সকাল ১০টার মধ্যে সব গাড়ি ঢাকায় নির্দিষ্ট ড্রপিং পয়েন্টে পৌঁছানোর চেষ্টা করা।
৬. কোনো গাড়ি নির্ধারিত ড্রপিং পয়েন্টে আসতে বা পৌঁছানো অসম্ভব হলে, যেখানে সম্ভব সেখানে গাড়ি অবস্থান করবে এবং প্রোগ্রাম শেষে সবাইকে সেখান থেকেই গাড়িতে উঠতে বলতে হবে।
৭. লাইনের গাড়িগুলো যথাসম্ভব নিজস্ব পার্কিংয়ে রাখার উদ্যোগ নেওয়া।
৮. গাড়ি পার্কিংয়ের সময় সিঙ্গেল লাইন পার্কিং করা এবং অন্য গাড়ির প্রবেশ ও বের হওয়ার জায়গা রাখা।
৯. ড্রপিং পয়েন্ট ও পার্কিং এরিয়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্রাফিক এবং স্বেচ্ছাসেবকদের নির্দেশনা মেনে চলা।
১০. সায়েদাবাদ, পোস্তগোলা, কদমতলী, মাতুয়াইল, কমলাপুর রেলস্টেশন, গাবতলী, মহাখালী, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, উত্তরা আজমপুর এবং সদরঘাটে ১০টি স্থানে অভ্যর্থনাকেন্দ্র থাকবে। প্রয়োজনে অভ্যর্থনাকেন্দ্র থেকে সহযোগিতা নেওয়া যাবে।
জামায়াত নেতারা মনে করছেন, এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে দলটি রাজনৈতিক অঙ্গনে তাদের পুনঃউপস্থিতি ও শক্তিমত্তা প্রদর্শনের সুযোগ পাবে। অতীতের কিছু রাজনৈতিক কৌশলগত ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার তারা আরও ব্যাপক ও সুসংগঠিত প্রস্তুতি নিচ্ছে।
উল্লেখযোগ্য যে, ১৯৪১ সালে পাকিস্তানের লাহোরে প্রতিষ্ঠিত জামায়াতে ইসলামী পরবর্তীতে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে একযোগে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করে। স্বাধীন বাংলাদেশে দলটি বহুবার রাজনৈতিক উত্তাপে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। তবে এই প্রথমবার বাংলাদেশের ইতিহাসে এককভাবে রাজধানীর কেন্দ্রস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশ করছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সমাবেশ শুধু জামায়াতের জন্যই নয়, বরং সমগ্র দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হতে পারে। নির্বাচনের আগে এমন একটি পদক্ষেপ দেশের রাজনীতিতে নতুন মোড় সৃষ্টি করতে পারে।
সম্পাদক : শাদমান আল আরবী | নির্বাহী সম্পাদক : তানভীর আল আরবী
ঠিকানা : ঝাউতলা, ১ম কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০। ফোন : ০১৩১৬১৮৬৯৪০, ই-মেইল : [email protected], বিজ্ঞাপন: [email protected], নিউজরুম: [email protected] © ২০২৩ রাইজিং কুমিল্লা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Design & Developed by BDIGITIC