
কুমিল্লার চান্দিনায় আপন জেঠাতো ভাইকে কোরবানির মাংস দেয়ায় লঙ্কাকান্ড ঘটান কথিত সমাজ প্রধান আলী আহাম্মদ। ওই সমাজপতির বেঁধে দেয়া নিয়মের বাহিরে গিয়ে কোরবানির মাংস বিতরণ করায় রোষানলে পড়ে কোরবানিদাতার বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করে বাড়ি ছাড়া করার অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বাড়েরা ইউনিয়নের টাটেরা গ্রামের রেনু মুহুরীর বাড়িতে। ওই গ্রামের উত্তরপাড়া এলাকার সমাজপতি আলী আহাম্মদ এর বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ উঠে। ভূক্তভোগী ইব্রাহীম খলিল ওই গ্রামের মৃত মনিরুল ইসলাম এর ছেলে। কোরবানি ঈদের পরদিন থেকে অদ্যবধি ২০ জুন (শুক্রবার) পর্যন্ত বাড়িছাড়া ইব্রাহীম খলিল এর পরিবার।
কুমিল্লার চান্দিনায় সমাজ প্রধানের করে দেওয়া নিয়মে কোরবানির মাংস বিতরণ না করায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে হামলা চালিয়ে বাড়ি ঘর ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে সমাজ প্রধান ও তার দুই ছেলের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগের ১১দিনেও আইনগত কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় গ্রাম ছাড়া ভুক্তভোগী পরিবার।
এ ঘটনায় ৯ জুন ভুক্তভোগী ইব্রাহীম খলিল বাদী হয়ে সমাজ প্রধান আলী আহাম্মদ (৬৮), তার দুই ছেলে ফয়েজ আহাম্মদ প্রকাশ সোহেল (৪০) ও ফিরোজ আহাম্মদ (৩৭) সহ অজ্ঞাতনামা আরও ২০-২৫ জনকে আসামী করে চান্দিনা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
ভূক্তভোগী ইব্রাহীম খলিল জানান- সমাজের মসজিদে নামাজ না পড়ার অজুহাতে সমাজ প্রধান আলী আহাম্মদের সিদ্ধান্তে বিগত ৪ বছর পূর্বে আমার জেঠাতো ভাই আব্দুল হালিমকে সমাজচ্যুত করা হয়। সেই থেকেই হতদরিদ্র হালিম কোরবানির মাংস থেকে বঞ্চিত। প্রতিবছরই আমার কোরবানির মাংস থেকে তাকে মাংস বিতরণ করে আসছি। বিষয়টি নিয়ে প্রতি কোরবানিতেই আমার সাথে দুরব্যবহার করে আসছে আলী আহাম্মদ। সমাজপতি কোরবানরি মাংস শরীয়াহ অনুযায়ী বিতরণ না করে তার নিজের নিয়েমে মাংস বিতরণ করতে সমাজকে বাধ্য করে আসছেন। এই বছরও হালিমকে কেন কোরবানীর মাংস দিলাম সেই কারণে আমার বাড়িতে এসে গালাগাল ও বিভিন্ন হুমকি ধমকি দেওয়া শুরু করে। আমি তার মনগড়া নিয়ম না মানায় আলী আহাম্মদ সহ তার দুই ছেলের নেতৃত্বে ২০ থেকে ২৫ দুস্কৃতকারী আমার বাড়ি ঘরে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। বাড়িতে পেলে আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দিচ্ছে তারা। বর্তমানে তাদের ভয়ে আজ ১২দিন গ্রাম ছাড়া, জীবন নিরাপত্তাহীনাতায় ভুগছি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. লোকমান হোসেনসহ ওই গ্রামের রাশেদ ভুইঁয়া, রিয়াজ ভূইঁয়া ও আবুল হোসেন জানান- আলী আহাম্মদ দীর্ঘ ১৫ বছর যাবৎ আমাদের সমাজের সমাজ প্রধান হিসেবে দায়ীত্ব পালন করে আসছেন, সমাজে শরীয়াহ মোতাবেক কোরবানির মাংস বিতরণের নিয়মকে না মেনে সে তার নিজের মনগড়া মাংস বিতরণের নিয়ম প্রথা চালু করেছে। বাধ্য হয়ে তার এই নিয়ম মেনেই কোরবানির মাংস বিতরণ করতে হয় কোরবানিদাতারা। বিগত কয়েক বছর পূর্বে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে মসজিদে নামাজ আদায় না করার অপরাধে গ্রামের হতদরিদ্র হালিম নামে এক ব্যক্তিকে সমাজচ্যুত করে কোরবানির মাংস পাওয়া থেকে বঞ্চিত করে রেখেছেন। ওই ব্যক্তিকে তার জেঠাতো ভাই কোরবানির মাংস কেন দিলেন সে অপরাধে তার বিরুদ্ধে সালিশি বৈঠক বসায়। সালিশি বৈঠকে সে আলী আহাম্মদের কথা না মানায় বাড়ি ঘরে হামলা ও ভাঙচুর করে।
এব্যাপারে অভিযুক্ত সমাজ প্রধান আলী আহাম্মদ বলেন- হালিমকে সমাজচ্যুত করা হয়নি। সে নিজেই অন্য সমাজে চলে গেছে। সে মানুষকে মামলা-হামলা করায় তাকে সমাজের মানুষ গ্রহণ করে না। আমি সমাজের প্রধান। কোরবানির বিতরণ নিয়ে ঝামেলা হওয়ায় সমাজের লোকজন ডেকে আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। আমি মিল করতে গিয়েছি। আমি বা আমার ছেলেরা কেউ হামলা-ভাঙচুর করেনি। এসব মিথ্যা।
এবিষয়ে চান্দিনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জাবেদ উল ইসলাম জানান- অভিযোগ পেয়েছি। পুলিশ ঘটনার দিনই এলাকা পরিদর্শন করেছিলো। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।