মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে কুমিল্লায় চান্দিনা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কামার সম্প্রদায়ের এলাকা টং টাং শব্দে মুখরিত।
ঈদের নামাজের পর পশু কোরবানির মধ্য দিয়েই শুরু হয় এই ঈদের তাৎপর্য। ঈদের দিন সকালে মুসলিম পরিবারে পশু কোরবানি, চামড়া ছাড়ানো, হাড় ও মাংস কাটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন সবাই। কোরবানির কাজে ব্যবহৃত দা, ছেনি, ছুরি, চাপাতি সারা বছর তেমন ব্যবহার না হলেও ঈদের দিনে এসব যন্ত্রের ব্যবহার খুব বেশি প্রয়োজন হয়ে পড়ে। তাই তো কোরবানিকে সামনে রেখে কামারপাড়া ভিড় বাড়তে শুরু করেছে মুসল্লিদের।
সরেজমিনে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা সদরের কামার পল্লী, দারোরা,ফাঐসহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে- প্রতিটি কামার দোকানে দা, ছুড়ি, চাপাতি তৈরিতে দিনরাত কাজ করছেন কামাররা। লোহার টুকরা আগুনে পুড়িয়ে সেগুলো পিটিয়ে দা, ছেনিসহ বিভিন্ন লোহার সরঞ্জাম তৈরির টুং টাং শব্দে মুখর কামার পল্লী।কামার পল্লীতে কেউ চুলায় ভাপি (বাতাস দেওয়ার বিশেষ যন্ত্র) টানছে, কেউ লোহা পিটছে, কেউবা শান দিচ্ছে। অনেক কামার দোকানে ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়োগ দিয়েছে। কামার পাড়ার টুং টাং শব্দ সকাল থেকে শুরু করে চলে গভীর রাত অবধি।
দা ও চাপাতি শান দিতে চান্দিনা বাজারের কামারপল্লীতে আসা নজরুল ইসলাম জানান, সারা বছর সংসারে দা ব্যবহার হলেও ছুরি ও চাপাতি গুলো কোরবানির পর অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকে।এক বছর সেগুলো ব্যবহার না করায় মরিচায় জং ধরে থাকে। তাই কোরবানি আসলেই দা, ছুরি ও চাপাতির শান দিতে নিয়ে আসি।
দা, ছুরি ও চাপাতিতে শান দিতে টাকা বেশি নেয়ার অভিযোগ করে বলেন, ‘অন্যান্য সময় ২০ টাকায় দা শান দেওয়া যায় কিন্তু কোরবানির সময় ৩০-৪০ টাকার নিচে শান দেওয়া যায়না। টাকা বেশি দিয়েও যখন-তখন পাওয়া যায় না, ২/৩ দিন পর এসে নিতে হয়।’
চাপাতি কিনতে আসে ক্রেতা মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘গত ঈদেও চাপাতি কিনেছিলাম। কিন্তু একদিন ব্যবহারের পর সেগুলো কোথায় আছে খুঁজেও পাই না। ঘরে একটি পেয়েছি তাও মাটিতে নষ্ট হয়ে গেছে। তাই এ বছর আবারও চাপাতি কিনতে এসেছি। কিন্তু গত বছরের তুলনায় এ বছর দামও অনেক বেশি।’
কামার সম্প্রদায়ের লোকজন বলেন, ‘লোহার দাম বেশি, কয়লারও দাম বেড়েছে। এ ছাড়া বছরের ১১ মাসই তেমন কাজ থাকে না। কোরবানির সময় অতিরিক্ত শ্রমিক বেশি টাকা বেতনে কাজে লাগাতে হয়। তাই কোরবানির সময় অন্যান্য সময়ের তুলনায় লোহার সরঞ্জামের দাম একটু বেশি থাকে।’
শান দেওয়ার টাকা বেশি নেওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘নতুন তৈরি করেই তো সময় পাই না। পুরাতন জিনিসে শান দিব কখন? রাত জেগে কাজ করে শ্রমিকরা তাই এই মৌসুমে শান দেওয়ার টাকা বেশি নেন সব কারিগররা।’বদরপুর বাজারের ব্যবসায়ী কামার স্বপন কর্মকার বলেন, ‘আগে শুধু কামার সম্প্রদায়ই এ পেশায় নিয়োজিত ছিল। অনেক পরিশ্রম এ পেশায়, তাই প্রকৃত কামারদের অধিকাংশই এ পেশা ছেড়ে দিয়েছে। অন্যান্য শ্রেণি-পেশার মানুষকে অতিরিক্ত বেতন দিয়ে এ কাজ করানো হচ্ছে। অন্যান্য সময় দম তেমন বেশি থাকে না, কিন্তু ঈদের মৌসুমে সবাই ২/৪ পয়সা পাওয়ার জন্য কিছুটা বেশি নেয়। দা, ছুড়ি, চাপাতি শান দিয়ে অনেকে খুশি হয়েও ১০-২০ টাকা বেশি দিয়ে যান।
সম্পাদক : শাদমান আল আরবী | নির্বাহী সম্পাদক : তানভীর আল আরবী
ঠিকানা : ঝাউতলা, ১ম কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০। ফোন : ০১৩১৬১৮৬৯৪০, ই-মেইল : [email protected], বিজ্ঞাপন: [email protected], নিউজরুম: [email protected] © ২০২৩ রাইজিং কুমিল্লা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Design & Developed by BDIGITIC