
গত কয়েকদিনের টানা অতিবৃষ্টিতে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এতে আমন ধান, বিভিন্ন প্রকারের সবজি এবং অন্যান্য রবি শস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, যা কৃষকদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। অনেক কৃষকের স্বপ্ন এখন পানির নিচে তলিয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নিচু এলাকাগুলো বিশেষ করে এই বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় কৃষকরা জানান, হঠাৎ করে নেমে আসা একটানা ভারী বর্ষণের কারণে ক্ষেতগুলো পানিতে ডুবে গেছে। পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় জলবদ্ধতা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে, যা ফসলের জন্য মারাত্মক হুমকি।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, শত শত একর জমির আমন ধানের চারা পানিতে নিমজ্জিত। অনেক ক্ষেতে ধানের চারা সবে রোপণ করা হয়েছিল, যা এখন পচে যাওয়ার উপক্রম। এছাড়া, বেগুন, শিম, লাউ, মরিচ এবং আলুর মতো বিভিন্ন প্রকারের সবজি ক্ষেতও সম্পূর্ণভাবে ডুবে গেছে। অনেক কৃষকের বীজতলাও পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় নতুন করে চারা উৎপাদন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
উপজেলার করতলা গ্রামের কৃষক আব্দুল হালিম বলেন, “ধারদেনা করে এই বছর আমন ধান লাগিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম ভালো ফলন হবে, কিন্তু সব শেষ। এখন সব জমি পানির নিচে, কী যে করব বুঝতে পারছি না।” একই কথা বলেন গল্লাই গ্রামের কৃষক রহমত আলী, “আমার সবজির ক্ষেত পুরোটা ডুবে গেছে। যেটুকু ফসল আশা করেছিলাম, সব শেষ। এখন দেনা শোধ করব কীভাবে সেটাই ভাবছি।”
চান্দিনা উপজেলা প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, আমরা কৃষকদের পাশে আছি। পানি সরে যাওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়া হবে। তবে, এই মুহূর্তে প্রধান কাজ হলো জলবদ্ধতা কমানো এবং কৃষকদের ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা।”
তবে কৃষকদের দাবি, শুধু আশ্বাস নয়, তাদের জন্য দ্রুত সরকারি সহায়তা প্রয়োজন। তারা সরকারের কাছে আর্থিক ক্ষতিপূরণ, সহজ শর্তে কৃষি ঋণ এবং উন্নত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার জোর দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
চান্দিনার এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুধু কৃষকদেরই নয়, স্থানীয় অর্থনীতিতেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাজারে সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ায় ইতোমধ্যে অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে, যা সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে তুলছে।