বৃহস্পতিবার ৩০ অক্টোবর, ২০২৫

চাঁদপুরে নয় মাসে সাপের কামড়ে মৃত্যু ৩, আহত পাঁচ শতাধিক

রাইজিং কুমিল্লা অনলাইন

Rising Cumilla -Snake bite
চাঁদপুরে নয় মাসে সাপের কামড়ে মৃত্যু ৩, আহত পাঁচ শতাধিক/প্রতীকি ছবি: এআই/রাইজিং কুমিল্লা

চাঁদপুর জেলায় চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নদী উপকূলীয় আটটি উপজেলায় মোট ৫৫৫ জন ব্যক্তি সাপের কামড়ে আহত হয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে বিষধর সাপের কামড়ে হাইমচর উপজেলায় ১ জন এবং কচুয়া উপজেলায় ২ জনের দুঃখজনক মৃত্যু হয়েছে।

চিকিৎসকদের মতে, জেলা সদর ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম মজুত থাকায় রোগী মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে। তবে এক্ষেত্রে রোগীর স্বজনদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। সম্প্রতি চাঁদপুরের সিভিল সার্জন কার্যালয় ও ২৫০ শয্যা চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতাল থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, সাপের কামড়ে সবচেয়ে বেশি আহত হয়েছে মতলব উত্তর উপজেলায় (১৭০ জন) এবং হাজীগঞ্জ উপজেলায় (১৩১ জন)। তবে আশার কথা, এই দুই উপজেলায় এখন পর্যন্ত কোনো মৃত্যুর খবর নেই।

কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ওই উপজেলায় সাপে কাটা দুই ব্যক্তি হাসপাতালে আনার আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন। এর মূল কারণ, ওই দুই ব্যক্তির পরিবার প্রথমে ওঝার কাছে নিয়ে চিকিৎসা দিয়ে ব্যর্থ হয়ে দেরিতে হাসপাতালে এসেছিলেন। জানা যায়, মৃত দুই ব্যক্তিকেই গোখরা সাপে কামড় দিয়েছিল।

কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সোহেল রানা বলেন, “গ্রামে এখনও অনেক কুসংস্কার প্রচলিত। সাপে কাটলে স্বজনরা ওঝা বা বেঁদের কাছে নিয়ে যান। অনেকেই সাপে কাটলে বৈজ্ঞানিক উপায়ে কীভাবে চিকিৎসা নিতে হবে বা সাপে কাটলে করণীয় কী তা জানেন না। ফলে অনেক ক্ষেত্রে রোগীর বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও, শুধু সঠিক জ্ঞানের অভাবে মারা যান।”

গত ৭ অক্টোবর জেলার হাইমচর উপজেলার ঈশানবালা বাজারে দুধ বিক্রির জন্য আসা সোহেল গাজি (৩৫) নামে এক ব্যক্তিকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম দেওয়ার পরও মৃত্যু হয়েছে।

সোহেলের স্বজনরা জানান, সাপ দংশনের প্রায় দেড়-দুই ঘণ্টা পর সোহেলকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালে চিকিৎসক তাকে দ্রুত অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করেন। তবে এর কিছুক্ষণ পরই তার মৃত্যু হয়।

এই বিষয়ে ওই সময়ে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আনিসুর রহমান বলেন, “সোহেল নামে রোগী আনার পর মাথা সোজা রাখতে পারছিলেন না এবং চোখও খুলতে পারছিলেন না। হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম ছিল, আমরা তা দ্রুত প্রয়োগ করেছি। সাপটি অত্যন্ত বিষধর ছিল। অনেক সময় রোগীরা হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই বা দেরিতে আসার কারণে এমন মৃত্যু ঘটে।”

তিনি আরও বলেন, “সাপের কামড়ের পর যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে আসা জরুরি। দেরি হলে শরীরে বিষ দ্রুত ছড়িয়ে যায় এবং জীবন রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে।”

চাঁদপুর সদর হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স সাদেক আলি জানান, চলতি বছরে তারা সাপে কাটা রোগীর জন্য ১৫০ ভায়াল অ্যান্টিভেনম পেয়েছেন। এর মধ্যে ১২ জন রোগীর জন্য ১২০টি বোতল প্রয়োগ করা হয়েছে এবং এখনও হাসপাতালে ৩০ বোতল মজুত আছে।

চাঁদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিক্যাল অফিসার (এমও-সিএস) ডা. মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, “উপজেলা পর্যায় থেকে পাঠানো তথ্যে জানতে পেরেছি প্রত্যেক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে অ্যান্টিভেনম মজুত আছে। কারণ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় স্থানীয়ভাবে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায় অ্যান্টিভেনম সংগ্রহ করে রাখতে হয়। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী সদর হাসপাতাল ছাড়া বাকি ৭ উপজেলায় ১১৯ বোতল অ্যান্টিভেনম মজুত আছে।”

তিনি আরও বলেন, “যত দ্রুত সম্ভব সাপে কাটা আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। কারণ বিষ প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনম এখন প্রত্যেক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিনামূল্যে প্রদান করা হয়।”

আরও পড়ুন