আমরা জানি, মসজিদে জামাতে নামাজ পড়ার ফজিলত অপরিসীম। সাধারণত মসজিদে অজু করার ব্যবস্থা থাকে বিধায় অনেকে মসজিদের অজুখানায় অজু করে জামাতে শামিল হন। কিন্তু জানেন কি ঘর থেকে অজু করে মসজিদে গেলে বাড়তি ফজিলতের ঘোষণা রয়েছে হাদিস শরীফে? নবীজির ঘোষণা অনুযায়ী, ওই ব্যক্তি ছয় ধরনের ফজিলত ও মর্যাদা লাভ করবেন।
আসুন হাদিসের আলোকে তা জেনে নিই-
অজুর পর থেকেই নামাজরত থাকার সওয়াব: হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন- إِذَا تَوَضَّأَ أَحَدُكُمْ فِيْ بَيْتِهِ ثُمَّ أَتَى الْـمَسْجِدَ كَانَ فِيْ صَلاَةٍ حَتَّى يَرْجِعَ فَلاَ يَقُلْ هَكَذَا : وَشَبَّكَ بَيْنَ أَصَابِعِهِ ‘যখন তোমাদের কেউ নিজ ঘরে অজু করে মসজিদের দিকে রওনা করে তখন তাকে সালাতরত বলেই গণ্য করা হয় যতক্ষণ না সে আবার ঘরে ফিরে আসে। সুতরাং সে যেন হাতের আঙ্গুলগুলোকে একটির মধ্যে আরেকটি ঢুকিয়ে না দেয়।’ (ইবনে খুজাইমা: ৪৩৯, ৪৪৭; হাকিম: ৭৪৪)
জামাতে নামাজ পড়ার সওয়াব: হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন- مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ وُضُوْءَهُ ثُمَّ رَاحَ فَوَجَدَ النَّاسَ قَدْ صَلَّوْا أَعْطَاهُ الله جَلَّ وَعَزَّ مِثْلَ أَجْرِ مَنْ صَلَّاهَا وَحَضَرَهَا لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أَجْرِهِمْ شَيْئًا ‘যে ব্যক্তি ভালোভাবে অজু করে মসজিদে গেলো অতঃপর দেখলো মানুষ সালাত পড়ে ফেলেছে তখন আল্লাহ তাআলা তাকে সালাত পড়ুয়াদের ন্যায় জামাতের সাওয়াব দিয়ে দিবেন। এমনকি তাদের সাওয়াবে একটুও ঘাটতি করা হবে না। (আবু দাউদ: ৫৬৪)
ইহরামরত হাজির সওয়াব: হজরত আবু উমামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- مَنْ خَرَجَ مِنْ بَيْتِهِ مُتَطَهِّرًا إِلَى صَلَاةٍ مَكْتُوبَةٍ فَأَجْرُهُ كَأَجْرِ الْحَاجِّ الْـمُحْرِمِ ‘যে ব্যক্তি নিজ ঘর থেকে পবিত্রতা অর্জন করে কোনো ফরজ সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে বের হয় তার সাওয়াব হবে একজন ইহরামরত হাজীর ন্যায়।’ (আবু দাউদ: ৫৫৮)
আল্লাহর সাক্ষাৎ পাওনা হয়ে যায়: হজরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (স.) বলেছেন- مَنْ تَوَضَّأَ فِيْ بَيْتِهِ فَأَحْسَنَ الْوُضُوْءَ ثُمَّ أَتَى الْـمَسْجِدَ فَهُوَ زَائِرُ اللهِ، وَحَقٌّ عَلَى الْـمَزُوْرِ أَنْ يُكْرِمَ الزَّائِرَ ‘যে ব্যক্তি নিজ ঘরে ভালোভাবে অজু করে (জামাতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে) মসজিদে আসে সে আল্লাহ তাআলার একান্ত সাক্ষাৎ পিয়াসি। আর যার সাক্ষাৎ কামনা করা হচ্ছে তাঁর দায়িত্ব হবে তার একান্ত সাক্ষাৎ পিয়াসির সম্মান করা।’ (তাবারানি কাবির: ৬১৩৯, ৬১৪৫; ইবন আবি শাইবা: ১৬৪৬৫)
আল্লাহ অনেক খুশি হন: হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন- لاَ يَتَوَضَّأُ أَحَدُكُمْ فَيُحْسِنُ وُضُوْءَهُ وَيُسْبِغُهُ ثُمَّ يَأْتِيْ الـْمَسْجِدَ لاَ يُرِيْدُ إِلاَّ الصَّلاَةَ فِيْهِ إِلاَّ تَبَشْبَشَ اللهُ إِلَيْهِ كَمَا يَتَبَشْبَشُ أَهْلُ الْغَائِبِ بِطَلْعَتِهِ ‘কেউ সুন্দরভাবে পরিপূর্ণ অজু করে জামাতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে আসলে আল্লাহ তাআলা তাকে দেখে অত্যন্ত খুশি হন যেমনিভাবে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত ব্যক্তিকে দেখে তার পরিবার খুশি হয়। (ইবন খুজাইমা: ১৪৯১)
প্রতি কদমে সওয়াব ও মর্যাদা এবং একটি করে গুনাহ মাফ: হজরত আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে- وَمَا مِنْ رَجُلٍ يَتَطَهَّرُ فَيُحْسِنُ الطُّهُوْرَ ثُمَّ يَعْمَدُ إِلَى مَسْجِدٍ مِنْ هَذِهِ الـْمَسَاجِدِ إِلاَّ كَتَبَ اللهُ لَهُ بِكُلِّ خُطْوَةٍ يَخْطُوْهَا حَسَنَةً وَيَرْفَعَهُ بِهَا دَرَجَةً، وَيَحُطُّ عَنْهُ بِهَا سَيِّئَةً ‘যেকেউ সুন্দরভাবে পবিত্রতার্জন করে মসজিদগামী হলে আল্লাহ তাআলা তাকে প্রতি কদমের বদৌলতে একটি করে পুণ্য দিবেন ও একটি করে তার মর্যাদা উন্নীত করবেন এবং একটি করে তার গুনাহ মুছে দিবেন।’ (সহিহ মুসলিম: ৬৫৪; আবু দাউদ: ৫৫০)