
খাবারের পরে বা গরমের দিনে অনেকেই ঠান্ডা পানি পান করতে পছন্দ করেন। কিন্তু এই অভ্যাস কি আপনার হজম প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে? হজম একটি সংবেদনশীল প্রক্রিয়া। এই প্রশ্নটি প্রায়শই উঠে আসে যে আমাদের পানির তাপমাত্রা কীভাবে এটিকে প্রভাবিত করে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক ঠান্ডা পানি কীভাবে আমাদের হজমের ওপর প্রভাব ফেলে-
হজমে ঠান্ডা পানির প্রভাবিত:
বিশেষ করে খাবারের সময় বা তার ঠিক পরে অতিরিক্ত ঠান্ডা জল পান করলে তা হজমের প্রক্রিয়াকে মন্থর করে দিতে পারে।
১. রক্তনালী সংকোচন: ঠান্ডা জল পেটে প্রবেশ করলে তা রক্তনালীকে সংকুচিত করে দেয়, ফলে পরিপাকতন্ত্রে রক্ত সরবরাহ হ্রাস পায়।
২. পেরিস্টালসিস ধীরগতি: এই কমে যাওয়া রক্ত প্রবাহ পেট এবং অন্ত্রের গতিবিধিকে (যাকে পেরিস্টালসিস বলা হয়) ধীর করে দেয়। পেরিস্টালসিস খাদ্যকে পরিপাকতন্ত্রের মধ্য দিয়ে পরিবহন করার কাজ করে।
৩. পেটে খাবার জট: এই ধীরগতির কারণে, খাবার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় পেটে থাকতে পারে। এর ফলে পেট ভারী হয়ে যাওয়া এবং পেট ফাঁপার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৪. হজমে বাধা: ঠান্ডা জল চর্বি এবং কার্বোহাইড্রেটের হজমকেও ধীর করে দেয়, যার ফলে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির শোষণও বিলম্বিত হয়।
পাকস্থলীর রক্তনালীর সংকোচন রক্ত সরবরাহ কমিয়ে দেয়। পাকস্থলী এবং অন্ত্রের গতিশীলতা (পেরিস্টালসিস) ধীর হয়ে যায়। পেট ভারী এবং পেট ফাঁপা দেখা দিতে পারে। চর্বি এবং কার্বোহাইড্রেটের হজম ধীর হয়, যা পুষ্টির শোষণকে প্রভাবিত করে।
কাদের সতর্ক হওয়া উচিত?
সুস্থ মানুষের জন্য ঠান্ডা জল খুব বেশি ক্ষতিকারক না হলেও, কিছু নির্দিষ্ট রোগে আক্রান্তদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন। যেমন: গ্যাস্ট্রোপেরেসিস, ডায়াবেটিস বা হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিরা ঠান্ডা জল পান করার পরে হজমে অস্বস্তি বোধ করতে পারেন। তাদের ক্ষেত্রে ঠান্ডা পানি ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (IBS), পেট ফাঁপা এবং পেট ভারী হওয়ার মতো সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
আপনি যদি ঘন ঘন হজম সংক্রান্ত সমস্যা অনুভব করেন, তাহলে ঠান্ডা পানি পান করার পরে আপনার শরীরের প্রতিক্রিয়ার দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখুন। এতে হজমের সমস্যা বুঝতে পারা এবং তা নিয়ন্ত্রণ করা আপনার জন্য সহজ হবে।
গবেষণা কী বলছে?
বৈজ্ঞানিক গবেষণা এই ধারণাকে সমর্থন করে যে ঠান্ডা জল হজমের গতিশীলতা পরিবর্তন করতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ২°C (প্রায় বরফের মতো ঠান্ডা) তাপমাত্রার পানি কীভাবে উষ্ণ জলের তুলনায় গ্যাস্ট্রিকের গতিশীলতাকে প্রভাবিত করে। গবেষকরা দেখেছেন যে অংশগ্রহণকারীরা যখন ৫০০ মিলি ২°C তাপমাত্রার পানি পান করেন, তখন তাদের পেটের সংকোচন হ্রাস পায় এবং পরবর্তী খাবারে তাদের খাবার গ্রহণ প্রায় ১৯-২৬% কমে যায়।
হজম প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখতে নিচের অভ্যাসগুলো অনুসরণ করুন:
খাওয়ার সময় বা তার ঠিক পরে খুব বেশি ঠান্ডা পানি পান করা এড়িয়ে চলুন। খাওয়ার সময় ঘরের তাপমাত্রায় বা হালকা ঠান্ডা পানি খান। নিজের শরীরের কথা শুনুন। যদি ঠান্ডা পানি পান করার পর অস্বস্তি হয়, তবে দ্রুত পানীয়ের অভ্যাস পরিবর্তন করুন। আগে থেকেই হজমের সমস্যায় ভুগলে, একসঙ্গে অনেকখানি পানি পান না করে অল্প অল্প করে চুমুক দিন।









