নভেম্বর ২৬, ২০২৪

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের উপর নিয়ন্ত্রণের প্রভাব: কুমিল্লা বার্ড কর্তৃক গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন

Impact of Regulation on Microfinance Institutions - Research Findings Presented by Cumilla Bard
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড) কর্তৃক সম্পাদিত “বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের উপর নিয়ন্ত্রণের প্রভাব” শীর্ষক গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) ঢাকাস্থ সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) এর এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ ফসিউল্লাহ সভাপতিত্ব করেন।

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সিনিয়র সচিব মোসাম্মত হামিদা বেগম। কর্মশালায় আরও বক্তব্য রাখেন বার্ডের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সুব্রত কুমার সিকদার।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সিনিয়র সচিব মোসাম্মত হামিদা বেগম বেসরকারি ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রদান কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

গবেষণার একটি উল্লেখযোগ্য ফলাফলের দিকে দৃষ্টিপাত করে এবং তাঁর পেশাগত অভিজ্ঞতা থেকে প্রধান অতিথি বলেন, ক্ষুদ্রঋণ খাতে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হওয়া সত্ত্বেও, এখানে এখনো বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ এবং বৈষম্য রয়ে গেছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের দরিদ্রদের মধ্যে কয়েকটি শ্রেণি রয়েছে। যার মধ্যে কিছু উন্নত দরিদ্র, কিছু মধ্যম দরিদ্র এবং একটি অংশ চরম দরিদ্র। যদিও বেসরকারি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো দারিদ্র্য বিমোচনে যথেষ্ট অবদান রেখেছে, এটাও অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে তারা প্রধানত উন্নত এবং মধ্যম দরিদ্রদের দ্বারে পৌঁছায়।

ফলে অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠী সে অর্থে বেসরকারি ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাগুলো থেকে সেবা পায় না। এসব প্রতিষ্ঠান মনে করে অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠী তাদের ঋণের টাকা ফেরত দিতে পারবে না। কিন্তু অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন করতে গেলে অবশ্যই বেসরকারি ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলোকে তাদের এ কমফোর্ট জোন থেকে বের হয়ে কাজ করতে হবে।

তাছাড়া দরিদ্র জনগোষ্ঠী যেন ঋণ-ধারের চক্রে আবদ্ধ না থেকে ঋণ গ্রহণ করে স্বাবলম্বী হতে পারে সে বিষয়েও ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলোকে যত্নবান হতে অনুরোধ করেন।

বার্ডের মহাপরিচালক সুব্রত কুমার সিকদার তাঁর বক্তব্যে এ ধরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটোরি অথরিটি (এমআরএ) এর এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ ফসিউল্লাহ কে ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি তিনি বার্ডের গবেষণা দলকে এ গবেষণাটি সফলতার সাথে সমাপ্ত করার জন্য সাধুবাদ জানান।

গবেষণা দলের দলনেতা ও বার্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. আবদুল করিম এবং গবেষণা দলের অন্যতম সদস্য ও বার্ডের পরিচালক রঞ্জন কুমার গুহ গবেষোণার ফলাফল উপস্থাপন করেন।

পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর অতিরিক্ত মহা ব্যবস্থাপক মোঃ ফজলুল কাদের এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন আলোচক হিসেবে গবেষণার ফলাফল উপর বিশেষজ্ঞ মতামত প্রদান করেন। মুক্ত আলোচনায় আমন্ত্রিত অতিথগণের মধ্য হতে দশ জন অতিথি গবেষণা ফলাফলের উপর আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।

ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী বেসরকারি সংস্থাসমূহের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটি (এমআরএ) এর উদ্যোগে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড) সম্প্রতি Implication of Regulation on the Microfinance Institutions in Bangladesh শিরোনামের এ গবেষণাটি সম্পন্ন করেছে।

এমআরএ কর্তৃক সময়ে সময়ে প্রবর্তিত আইন, বিধি ও সার্কুলার কীভাবে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমকে প্রভাবিত করেছে সেটি নিরূপণ করাই এ গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল।

বিগত ছয় মাসেরও অধিক কাল ধরে দেশের ৮টি বিভাগের ২২টি জেলা থেকে নির্বাচিত ১৬২টি ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এবং এর সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও সংস্থার নিকট থেকে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে বার্ডের একটি গবেষণা দল গবেষণাটি সম্পন্ন করে।

কর্মশালায় বার্ডের গবেষকবৃন্দ, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটি কর্মকর্তাবৃন্দ, ক্ষুদ্র ঋণ বিশেষজ্ঞ, এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষুদ্রঋণ পরিচালনাকারী ছোট, বড় এবং মাঝারি প্রায় পঞ্চাশটির মত প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও তাদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।