ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড়ে শেষ সময়ে এসে জমে উঠেছে ২৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা।
মেলা শেষ হতে বাকি হাতে গোনা কয়েক দিন। ৩১ জানুয়ারি শেষ হবে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৯তম এই প্রদর্শনী। এজন্য প্রতিদিনই বাড়ছে দর্শক ক্রেতাদের ভিড়। ভিড় বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে কেনাবেচাও। দেশিও পণ্যের পাশাপাশি চাহিদা রয়েছে বিদেশি পণ্যেরও।
এভাবে চলতে থাকলে এবারের মেলায় ৫শ’ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হবে আশা করছেন ইপিবি’র সহকারি পরিচালক ও ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ইনচার্জ আবু হাসান।
তিনি জানান, এবারের মেলায় দর্শক ক্রেতাদের উপস্থিতি বিগত বছরগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। প্রতিদিন ১ থেকে দেড় লাখ মানুষের সমাগম ঘটছে মেলা প্রাঙ্গণে। শেষ মুহূর্তে এসে যেন ভিড়ও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। সেই সাথে বাড়ছে বেচা-বিক্রিও। ছুটির দিনগুলোতে সেই ভিড় ছাড়িয়ে যায় প্রত্যাশার চেয়েও অনেক বেশি।
দর্শকদের এই উপচে পড়া ভিড়ের কারণ হিসেবে বাণিজ্য মেলার ইনচার্জ বলেন, প্রতি বছরই মেলায় কিছু কিছু না নতুন ইনোভেশন যুক্ত থাকে। এবারের মেলায় রক্তাত্ত জুলাই-আগষ্ট বিপ্লব ও বিপ্লবীদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে রাখার জন্য কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব উদ্যোগের মধ্যে জুলাই চত্ত্বর, ছত্রিশ চত্ত্বর এবং ইউথ প্যাভিলিয়ন নামে তিনটি পৃথক স্টল দেয়া হয়েছে। এখানে জুলাই বিল্পবের নানা স্লোগান, গ্রাফিতি এবং বাণী প্রদর্শন করা হচ্ছে। সকল শ্রেণির মানুষ সেগুলো গভীর আগ্রহের সাথে পরিদর্শন করছেন। এছাড়া এবারে বাণিজ্য মেলায় সিনিয়র সিটিজেন কর্ণার, সোর্সিং জোন, উইমেন এন্টারপ্রেনারস কর্ণার এবং শিশু পার্কের ধারণা মেলাকে বিশেষ বৈশিষ্ট্য মন্ডিত করে তুলেছে।
তিনি আরও জানান, মেলায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কারা ভালো করছেন। কাদের পণ্যের চাহিদা বেশি, এসব বিষয় পর্যবেক্ষণের জন্য ইপিবির ৩০ সদস্যের একটি দল সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছেন। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতেই এবারের মেলায় অংশগ্রহণকারিদের মধ্য থেকে ১১টি ক্যাটাগরিতে প্রত্যেকে ১ম, ২য় এবং ৩য় স্থান নির্ধারণ করে পুরস্কার দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
তিনি আরও জানান, এবারের মেলায় ৭টি দেশ থেকে তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, হংকং,মালয়েশিয়া, পাকিস্তান এবং ভারতের ১২টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। এছাড়া বিদেশী ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে এবারই প্রথম একটি কর্ণারে ‘সোর্সিং জোন’ নামে একটি কর্ণার করা হয়েছে। এখানে বাংলাদেশ চা বোর্ড, বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি লিমিটেড, লেদারগুডস এন্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ তাদের উৎপাদিত পণ্য প্রদর্শন করছে।
সোর্সিং জোনে বিজিএমইএ’র প্যাভিলিয়নের ইনচার্জ সিজান মাহমুদ প্লাবী জানান, সোর্সিংয়ের জন্য এতদিন আমরা শুধু দেশের বাইরের মেলাতে অংশগ্রহণ করে বায়ার সোর্সিং করতাম। এবারই প্রথম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় বায়ার সোর্সিংয়ের আমরা অংশগ্রহণ করেছি। আমাদের প্যাভিলিয়নে বিদেশী দামি ব্র্যন্ডের ১২টি প্রতিষ্ঠানের উচ্চমূল্যের পণ্য প্রদর্শণ করা হচ্ছে। যাতে আমাদের উৎপাদিত পণ্যটি বাংলাদেশের শ্রমিকদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হয়েছে, তা জানিয়ে দেয়া যায়।
তিনি আরও জানান, মেলার প্রথম দিকে অনেক বিদেশি, বিদেশি মিশনের কর্মকর্তা, ডোনার এজেন্সি, বায়ার প্রতিনিধি বিজিএমইএ প্যাভিলিয়ন ভিজিট করে কন্ট্রাক্ট ডিটেইল নিয়ে গেছেন। হয়তো তারা উদ্যোক্তাদের সাথে যোগাযোগ করবেন। অর্ডারের বিষয়ে আলাপ আলোচনা করবেন। তবে এখন মেলায় দর্শনার্থীদের ভিড় বেড়ে যাওয়ায় বিদেশিরা তেমন আসছেন না। তবে তিনি মনে করেন, এ মেলায় তাদের জন্য ইতিবাচক সাড়া মিলবে।
এদিকে দেখা গেছে ঢাকার আশেপাশের এলাকা থেকে মেলায় কেউ পরিবার আবার কেউ প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে এসেছেন। কেনাকাটার পাশাপাশি নিজেদের মুহূর্তগুলো ফ্রেমে বন্দি করতেও ভুলছেন না তারা। এর বাইরেও পছন্দের পণ্য সুলভ মূল্যে পাওয়ার আশায় অনেকই আসছেন বাণিজ্য মেলায়।
এমনই একজন দর্শক ক্রেতার কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তার নাম এস এম আব্দুল্লাহ। তিনি তার পরিবার নিয়ে ঢাকার শান্তিনগর থেকে বাণিজ্য মেলায় এসেছেন। বাচ্চার জন্য কিছু খেলনা কিনেছেন। তিনি জানালেন প্রতি বছরই তিনি বাণিজ্য মেলায় আসেন। এবারের মেলার পরিবেশটা একটু ভিন্ন রকম। গাড়ি পার্কিংয়ের স্থানটাও আগের চেয়ে বেশ বড়। পাশাপাশি ব্যবস্থাপনাটা বেশ পরিচ্ছন্ন। এবার মেলায় প্রবেশের টিকেট কাটা নিয়েও কোন বিড়ম্বনা নেই বলে জানালেন তিনি।
ঘরে বসেই অনলাইনে সহজেই টিকেট কাটা যাচ্ছে। তাই টিকেট কাটা নিয়ে ঝাক্কি ঝামেলাও কম হচ্ছে।
বাণিজ্য মেলায় দেখা গেছে বাহারি পণ্য আর মূল্য ছাড়ের ছড়াছড়ি। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে ও আয়োজকদের ছিল নানা উদ্যোগ। এবার দেশি পণ্যের পাশাপাশি ক্রেতাদের চাহিদার তালিকায় রয়েছে কার্পেট, শাল, বাহারি বাতি, গৃহস্থালি সাজ সজ্জার বিদেশী পণ্য।
উল্লেখ্য, ১ জানুয়ারি ঢাকার পূর্বাচলে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশীপ এক্সিবিশন সেন্টারে ২৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক ঢাকা আন্তর্জাতিক এই বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।