গত ১৮ জুলাই কোটাবিরোধী আন্দোলনে কুমিল্লার কোটবাড়ি এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে ডান পাশের চোখ হারিয়েছেন সাগর (২২) নামে একজন। এছাড়াও কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী শাহেদুল ইসলামসহ আরো ২ জন দৃষ্টি হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন।
জানা গেছে, ওই দিন কোটা সংস্কার আন্দোলনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি), কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজসহ কুমিল্লার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সাথে মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছিলেন তারা। সেই আন্দোলনে সাগরও যোগ দিয়েছিলেন।
আন্দোলনের এক পর্যায়ে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে পুলিশ, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে দেখা যায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের।
এসময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল মারতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। পরে পাল্টা জবাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে টিয়ার শেল গ্যাস, রাবার বুলেট, সাউন্ড ছুড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে পুলিশ একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে।
হঠাৎ সাগরের শরীরে ও চোখে পুলিশের কয়েক ছররা গুলি লাগে। আহত অবস্থায় সাগরকে ভর্তি করা কুমিল্লা মেডিক্যালে কলেজ হাসপাতালে। এই প্রতিবেদন লেখার পূর্বে তিনি ওই হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি রয়েছেন। প্রাপ্ত তথ্যমতে, সাগরের ডান চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।
পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, দরিদ্র্যতার কারণে সাগর বেশি পড়াশোনা করতে পারেননি। কুমিল্লার কোটবাড়ি এলাকার একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন তিনি। সেদিন বিবেকের তাড়না থেকে কোটা আন্দোলনকারীদের সাথে যোগ দিয়েছিলেন সাগর। সাগরের বুক, কপাল ও হাত-পায়ে ৩০ টি ছররা গুলি লেগেছিল। দুই-তিনটি গুলি লেগেছে তার চোখে। এতে করে তাঁর দুই চোখ মারাত্মক জখম হয়।
এদিকে কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসানও দৃষ্টি হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন। কোটবাড়ি এলাকায় আন্দোলনের সময় ওইদিন বিকাল চারটায় মেহেদীর চোখে গুলি লাগে।
মেহেদী মুঠোফোনে বলেন, "শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ প্রচন্ড আক্রমণ করছিলো। হঠাৎ আমার নাকে, মুখে ও চোখে গুলি লাগে।"
তিনি আরও বলেন, 'আমার দুটি চোখেই গুলি লেগেছে। গত ২৩ তারিখ গ্রীন রোডের ভিশন আই হাসপাতালে অপারেশন হয়েছে। ৩১ তারিখ আবার অপারেশন হবে। ডাক্তার বলেছে আমার একটি চোখ ইতিমধ্যে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।'
অন্যদিকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী শাহেদুল ইসলামও চিরদিনের জন্য চোখে দেখবেন না বলে প্রতিবেদককে জানিয়েছেন তার ছোট ভাই সায়মন ইসলাম। তিনি জানান, গুলি সরাসরি রেটিনায় আঘাত করেছে। ফলে তার অবস্থা মারাত্মক। এখন সে চোখে সবকিছু ঝাপসা দেখেন। যদিও সে কুমিল্লার কুচাইতলি চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। চিকিৎসক জানিয়েছে, আগামী এক মাস পর তার চোখের ছানির অপারেশন হবে।
এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে কুমিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের আরো দুই শিক্ষার্থী চোখে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। বর্তমানে তারা ঢাকার গ্রীন রোডের ভিশন আই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
সম্পাদক : শাদমান আল আরবী | নির্বাহী সম্পাদক : তানভীর আল আরবী
ঠিকানা : ঝাউতলা, ১ম কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০। ফোন : ০১৩১৬১৮৬৯৪০, ই-মেইল : [email protected], বিজ্ঞাপন: [email protected], নিউজরুম: [email protected] © ২০২৩ রাইজিং কুমিল্লা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Design & Developed by BDIGITIC