কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মা নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের ভূরকা, হাটখোলা ও কোলদিয়া এলাকার প্রায় চার কিলোমিটারজুড়ে এই ভাঙন দেখা দেওয়ায় চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা।
ভাঙনের তীব্রতা এতটাই বেশি যে, ইতিমধ্যেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে কয়েক হাজার বিঘা ফসলি জমি, বহু ঘরবাড়ি এবং বেশ কিছু সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা। হুমকির মুখে পড়েছে নদীর পাড় ঘেঁষা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, ভারত থেকে আসা বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে চলা এই ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পদ্মাপাড়ের মানুষ। চোখের সামনে তাদের আবাদি জমি নদী গ্রাস করছে। একসময়ের দীর্ঘ পথ এখন মুহূর্তেই পরিণত হয়েছে নদীর কিনারে।
পদ্মাপাড়ের বাসিন্দা সিদ্দিকুর রহমান আক্ষেপ করে বলেন, "আগে বাড়ি থেকে জমিতে যেতে পাঁচ কিলোমিটার হাঁটতে হতো। এখন দুই মিনিটেই নদীর পাড়ে চলে আসি। পদ্মার গ্রাসে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে।" দ্রুত স্থায়ী সমাধান না হলে বসতভিটাও হারানোর আশঙ্কা করছেন তিনি।
একই এলাকার সিরাজ মণ্ডল জানান, তাদের এলাকার চার কিলোমিটারজুড়ে ভাঙন চলছে। তবে, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) আপাতত হাটখোলা থেকে ভূরকা পর্যন্ত এক কিলোমিটার এলাকায় বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করেছে। দুটি প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২ লাখ ৩৫ হাজার জিওব্যাগ ফেলা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রোকনুজ্জামান।
এই উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও বাকি তিন কিলোমিটারের ভাঙন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তাদের দাবি, পুরো এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর পাশাপাশি দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের পদক্ষেপ নেওয়া হোক।
সুইট আহমেদ নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, "সরকার যে জিওব্যাগ ফেলছে, তাতে আমরা খুশি। তবে স্থায়ী বাঁধ না হলে আমাদের আতঙ্ক কাটবে না।"
এ বিষয়ে জেলা পাউবোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ জানান, তারা প্রাথমিকভাবে এক কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন রোধের কাজ শুরু করেছেন। বাকি তিন কিলোমিটার এলাকার পরিস্থিতি মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে এবং স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের বিষয়েও আলোচনা চলছে।
তবে, বর্ষা মৌসুমের আগে পুরো এলাকায় ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। তাদের একটাই দাবি, পদ্মার এই আগ্রাসী থাবা থেকে তাদের ঘরবাড়ি ও জমি রক্ষা করতে দ্রুত স্থায়ী সমাধান করা হোক।
সম্পাদক : শাদমান আল আরবী | নির্বাহী সম্পাদক : তানভীর আল আরবী
ঠিকানা : ঝাউতলা, ১ম কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০। ফোন : ০১৩১৬১৮৬৯৪০, ই-মেইল : [email protected], বিজ্ঞাপন: [email protected], নিউজরুম: [email protected] © ২০২৩ রাইজিং কুমিল্লা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Design & Developed by BDIGITIC