মে ২৩, ২০২৫

শুক্রবার ২৩ মে, ২০২৫

কুমিল্লা সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ২৬ জনের পরিচয় প্রকাশ

ছবি: আইএসপিআর

গত বছর জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরবর্তী সেনানিবাসের অভ্যন্তরে ‘প্রাণ রক্ষার্থে’ আশ্রয় নেওয়া ৬২৬ জনের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করেছে আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। এই তালিকায় দেখা গেছে ‘আত্ম রক্ষার্থে’ কুমিল্লা সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন কুমিল্লার তৎকালীন জেলা প্রশাসক খন্দকার মুশফিকুর রহমান, পুলিশ সুপার সাইদুল ইসলাম ও হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি খাইরুল আলম, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি আবদুল মঈনসহ আরও ২৬ জন।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) দিনগত রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর ওই নামগুলো প্রকাশ করে। এছাড়াও ওই ব্যক্তিদের কোন পরিস্থিতিতে এবং কেন আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল সেটিরও স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

আইএসপিআরের দেওয়া তালিকায় কুমিল্লা সেনানিবাসে যারা আশ্রয় নিয়েছিলেন তারা হলেন- কুমিল্লার তৎকালীন জেলা প্রশাসক খন্দকার মুশফিকুর রহমান, পুলিশ সুপার সাইদুল ইসলাম ও হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি খায়রুল আলম, কুমিল্লা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আবদুল মঈন, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামীলীগ নেতা মীর্জা মো: কোরাইশী, পুলিশের ইন্সপেক্টর আসিফ, কনস্টেবল দিদারুল, মাসুদ, আরিফ, রিপন, জাহিদ, কাইয়ূম, ফেরদৌস, কা হায় মং, মেহেদী, ইব্রাহিম, আমির, নায়েক ইদ্রিস, এএসআই সুদিপ্তা, এএসআই সুশ্ময়, এএসআই আবুল কাওসার, এএসআই লিটন চাকমা, কনস্টেবল সুজন, এএসআই আজিজ ও ওসি সঞ্জয়।

ছবি: আইএসপিআর

আইএসপিআর জানিয়েছে, তৎকালীন বিরাজমান নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে আশ্রয় প্রার্থীদের জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তিকর সংবাদ ছড়িয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার পাশাপাশি জনগণের সঙ্গে দূরত্ব তৈরির অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সেনানিবাসের অভ্যন্তরে প্রাণ রক্ষার্থে আশ্রয় গ্রহণকারী ৬২৬ জন ব্যক্তিবর্গের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হলো।

আইএসপিআর আরও জানায়, জুলাই-আগস্টের ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে বিগত সরকারের পতনের পর কতিপয় কুচক্রী মহলের তৎপরতায় সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়। ফলশ্রুতিতে, সরকারি দপ্তর, থানাসমূহে হামলা, রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ওপর আক্রমণ ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, মব জাস্টিস, চুরি, ডাকাতিসহ নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। এ ধরণের সংবেদনশীল ও নাজুক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে দেশের নাগরিকদের মনে নিরাপত্তাহীনতার জন্ম নেয়। এমতাবস্থায়, ঢাকাসহ দেশের প্রায় সকল সেনানিবাসে প্রাণ রক্ষার্থে কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার নাগরিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন। উদ্ভূত আকস্মিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সেনানিবাসে আশ্রয়প্রার্থীদের পরিচয় যাচাই বাছাই করার চাইতে তাদের জীবন রক্ষা করা প্রাধান্য পেয়েছিল। এই প্রেক্ষিতে ২৪ জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ৫ জন বিচারক, ১৯ জন বেসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তা, ৫১৫ জন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাসহ অন্যান্য ১২ জন ও ৫১ জন পরিবার পরিজন (স্ত্রী ও শিশু) সহ সর্বমোট ৬২৬ জনকে বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় প্রদান করা হয়েছিল।

আইএসপিআর জানিয়েছে, সেসময়ে শুধুমাত্র মানবিক দায়বদ্ধতার কারণে আইন বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড থেকে আশ্রয় প্রার্থীদের জীবন রক্ষা করাই ছিল মুখ্য উদ্দেশ্য। পরিস্থিতি উন্নয়ন সাপেক্ষে, আশ্রয় গ্রহণকারীদের বেশিরভাগই ১ থেকে ২ দিনের মধ্যেই সেনানিবাস ত্যাগ করেন এবং এর মধ্যে ৫ জনকে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বা মামলা হলে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়।

অপরদিকে সেনানিবাসে অবস্থানকারী ও আশ্রয় প্রার্থীদের ব্যাপারে গত ১৮ আগস্ট আইএসপিআর এর আনুষ্ঠানিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

একই দিনে ১৯৩ জন ব্যক্তির একটি তালিকা (৪৩২ জন সাধারণ পুলিশ সদস্য ও ১ জন এনএসআই সদস্য ব্যতীত) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়, যা ছিল একটি মীমাংসিত বিষয়।

তাই সকলকে এই ধরণের বিষয়ে বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচার থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে আইএসপিআর। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি পেশাদারত্ব, নিষ্ঠা ও আস্থার সঙ্গে জাতির পাশে থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছে।

আরও পড়ুন