
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের পৃথক তিনটি শিক্ষাবর্ষে সেমিস্টার ফলাফল প্রকাশ না করে নতুন সেমিস্টার পরীক্ষা নেওয়ার অভিযোগ করেছেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। সংশ্লিষ্ট বিভাগের বেশ ক’জন শিক্ষার্থী এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
পরীক্ষার নিয়মানুযায়ী, পূর্ববর্তী সেমিস্টারের ফলাফল প্রকাশ ব্যতীত পরবর্তী সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা না নেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু আইন বিভাগের পৃথক তিনটি শিক্ষাবর্ষে এই আইন ভঙ্গ করেছেন সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা কমিটির সভাপতিবৃন্দ। চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের দ্বিতীয় বর্ষ প্রথম সেমিস্টার অর্থাৎ তৃতীয় সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়, এবং ১৪ মে শেষ হয়। তবে দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষা শেষ হওয়ার ছয়মাস অতিক্রম হলেও এখন পর্যন্ত ফলাফল হাতে পায়নি সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, আইন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষা ২০২৪ সালের ২০ অক্টোবর থেকে শুরু হয় এবং ৪ নভেম্বর হয়। একইভাবে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের দ্বিতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষা ২৩ অক্টোবর শুরু হয় এবং ৩ নভেম্বর শেষ হয়। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টার ফাইনাল ২০২৪ সালের ৩০ অক্টোবর থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় । তবে কোনো শিক্ষাবর্ষেরই ফলাফল প্রকাশ না করেই, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে প্রত্যেকটি শিক্ষাবর্ষের পরবর্তী সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।
বিভাগের এমন হঠকারী সিদ্ধান্তে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, পূর্ববর্তী সেমিস্টারের ফলাফল না পাওয়ায় পূর্ববর্তী সেমিস্টারে কতটা ভালো বা খারাপ করেছেন তা তারা বুঝে উঠতে পারেননি। ফলে পরবর্তী সেমিস্টারে কতটুকু ভালো করতে হবে তা শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারেননি। এতে তাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
আইন বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ আলী মোর্শেদ কাজেম বলেন, “এটা আসলেই ঠিক না। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সময়মতো ফলাফল দেওয়া সম্ভব হয়নি। বাহিরের (বহিঃস্থ) পরীক্ষকের কাছে যে খাতাগুলো যায়, সেগুলো সময়মতো ফিরে আসে না। ফলে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরীক্ষা কমিটির সভাপতিদের সাথে মিটিংয়ে তারা জানিয়েছেন ফলাফল অতিদ্রুত দেওয়া হবে। এরইমধ্যে ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের আনঅফিশিয়াল ফলাফল জানানো হয়েছে। তবে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ফলাফল এখনও দেওয়া হয়নি, যদিও ২২ মে’র মধ্যে ফলাফল সাবমিট হওয়ার কথা। পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যানের কাছে জানতে হবে,এখন পর্যন্ত কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে।”
বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাঈদা তালুকদার রাহী ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি। আজ (২৬ মে) সকালে তাঁকে ওই পরীক্ষার ফলাফল সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি কলটি বিচ্ছিন্ন করে দেন। এদিকে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা কমিটির সভাপতিও সাঈদা তালুকদার রাহী। পূরবর্তী সেমিস্টারের ফলাফল ব্যতীত পরবর্তী সেমিস্টার (দ্বিতীয় বর্ষ প্রথম সেমিস্টার) কীভাবে নিয়েছেন এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার কল দিলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ নূরুল করিম চৌধুরী বলেন, “আমরা বর্তমান প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাই বিশ্ববিদ্যালয়কে একটা জায়গায় নিয়ে আসার জন্য কাজ করছি। এই বিষয়ের দায় আমরাও অস্বীকার করছি না। আইন বিভাগ থেকে অনেক সময় বলা হয় যে, বাইরে থেকে খাতাগুলো সঠিক সময়ে আসে না। এর দায়ভার পরীক্ষা কমিটির যেমন আছে, আমাদেরও তেমন আছে। ভিসি এবং প্রো-ভিসি স্যারের কড়া নির্দেশ যে ডিপার্টমেন্ট রেজাল্ট প্রকাশ করবে না, তারা পরবর্তী সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নিতে পারবে না। আমরাও সেই নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি। পরীক্ষা কমিটি তাদের জায়গা থেকে স্ট্রং থাকলে, আমাদেরও কাজ করতে সুবিধা হয়।”
সহ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল বলেন, “আমাদের পরিষ্কার নির্দেশনা আছে রেজাল্ট হাতে না পেয়ে যেন পরবর্তী সেমিস্টারের রুটিন প্রকাশ না করা হয় এবং সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নেওয়া না হয়। তারপরও আমি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও পরীক্ষার কমিটির সাথে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলবো।”