কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) কাজী নজরুল ইসলাম হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাত ১টায় হলটির ২০৯ নম্বর কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের নিজেদের কক্ষে ডাকতে গিয়ে সংঘর্ষে জড়ায় ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ১৫ তম ব্যাচের আবাসিক শিক্ষার্থীরা ২০৯ নম্বর কক্ষে মিটিংয়ে বসে। মিটিংয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুই পক্ষে বিভক্ত ছিলো। একটি পক্ষের মধ্যে ছিলেন ইমতিয়াজ আহমেদ চিন্ময়, গোলাম দস্তগীর, হাসিব হাসান, রাজু মিয়াজী ও ফয়সাল। অপর পক্ষে ছিলেন আকাশ রাজবংশী, সোহাগ চৌধুরী, আশিকুর রহমান এবং সাদির আহমেদ।
মিটিং চলাকালীন দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে ফয়সাল সাদিরকে ঘুসি দেয়। পরে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির সৃষ্টি হয়।
সংঘর্ষ চলাকালীন হলে অন্যান্য সিনিয়র শিক্ষার্থীরা এসে তাদের থামানোর চেষ্টা করে। একপর্যায়ে মারামারি থামান তাদের ( ১৫ ব্যাচের) সিনিয়ররা এবং একইসাথে দুই পক্ষকে মীমাংসার জন্য ৫০৭ নম্বর রুমে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কাজী নজরুল ইসলাম হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি নাজমুল হাসান পলাশের উপস্থিতিতে ১৪তম আবর্তনের শিক্ষার্থীরা তাদের মধ্যে মিটমাট করে দেয়।
এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে কাজী নজরুল ইসলাম হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল হাসান পলাশ জানান, হলের জুনিয়ররা নিজেদের মধ্যে ব্যক্তিগত সমস্যার জেরে বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হয়েছে। কেউ কাউকে আঘাত করেনি। হল সভাপতি হিসেবে আমি তাদের ডেকে বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছি।
মিটিংয়ে বাকবিতণ্ডা এবং সংঘর্ষ বা মারামারির কারণ সম্পর্কে ২০৯ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী সোহাগ চৌধুরী জানায়, আমরা ১৬ তম আবর্তনের শিক্ষার্থীদেরকে ২০৯ নম্বর কক্ষে খিচুড়ি খাওয়ার জন্য ডাকি। কিন্তু তাদের ১০৯ নম্বর রুমে আটকে রেখে ১৫তম আবর্তনের হাসিব, ফয়সাল, রাজু, চিন্ময়, দস্তগীর তাদের ( জুনিয়রদের) সাথে কথা বলতে থাকে।
পরে আমরা তাদের (জুনিয়র) ১০৯ নম্বর কক্ষ থেকে আমাদের রুমে খাওয়ার জন্য ডেকে আনি। খাওয়ার পর আমরা ১৫তম আবর্তনের সবাই মিলে ২০৯ নম্বর কক্ষে মিটিংয়ে বসি। মিটিংয়ে জুনিয়রদের রুম থেকে ডেকে আনা নিয়ে আমাদের উপর চড়াও হয় ফয়সাল, রাজু, চিন্ময়, হাসিব ও দস্তগীর। তর্কের এক পর্যায়ে ফয়সাল সাদিরকে ঘুসি দেয় এবং বাকিরাও আমাদের উপর হামলা করে। হামলায় আমাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়।
তবে আরেক পক্ষের শিক্ষার্থী হাসিব হাসান বলেন, আমরা ১০৯ নম্বর কক্ষে ১৬তম আবর্তনের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলতে যাই। এসময় সাদির, আকাশও সোহাগ দরজায় লাথি দিয়ে কক্ষে ঢুকে এবং জুনিয়রদের সামনে আমাদের সাথে দুর্ব্যবহার করে। পরে আমরা তাদের রুমে মিটিংয়ে বসে দুর্ব্যবহারের কারণ জানতে চাই। তখন তারা ক্ষীপ্ত হয় এবং আমাদের মেরে রুম থেকে বের করে দেয়।
এদিকে সংঘর্ষের বিষয়ে ১৪তম আবর্তনের একজন আবাসিক শিক্ষার্থী জানান, ‘আজকের সংঘর্ষের ঘটনা এক দিনে ঘটেনি। অনেকদিন থেকে হলের ১৫তম আবর্তন শিক্ষার্থীরা দুই গ্রুপে বিভক্ত। আধিপত্য বিস্তারে ১৬ আবর্তনের জুনিয়রদের কাছে টানতে তাদের মধ্যে রেষারেষি হতে থাকে। যার দরুন আজকে এ সংঘর্ষ।
এ বিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মিহির লাল ভৌমিক বলেন, ‘আমাদের কাছে কোন পক্ষ লিখিত কোন অভিযোগ দেয়নি। তবে আমি জানতে পেরেছি তারা বন্ধুদের সাথে বিষয়টি মিটমাট করে নিয়েছে। প্রশাসনিক জায়গা থেকে এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’