কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) সায়েন্স ক্লাবের উদ্যোগে দ্বিতীয়বারের মতো দিনব্যাপী জাতীয় বিজ্ঞান উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালে জাতীয় বিজ্ঞান উৎসবের আয়োজন করা হয়। এতে কুমিল্লার বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে নয়টায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন এটি উদ্বোধন করেন।
জানা গেছে, এ বিজ্ঞান উৎসবে সাইন্স অলিম্পিয়াড, রুবিক্স কিউব কম্পিটিশন, সকার বট প্রতিযোগিতা, প্রজেক্ট শো, এক্সিবিশন, রোবট ফাইটিংসহ মোট সাতটি সেগমেন্টের আয়োজন ছিল। যেখানে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজ থেকে প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।
এক্সিবিশনে মোট ৮০ টি স্টলে শিক্ষার্থীরা তাদের বিভিন্ন প্রজেক্ট উপস্থাপন করেন। স্মার্ট সিটি, স্মার্ট রেল গেইট, স্মার্ট ভয়েস কন্ট্রোলার গাড়ি, স্মার্ট বাংলাদেশ স্মার্ট সিটি, ইউনিক সিটি, অর্বিটাল সিটি, সেইভ আর্থ, অটোমেটিক ফায়ার এক্সটিংগুইসার, সোলার এনার্জি, স্মার্ট ব্রিজ, বর্জ্য পদার্থের পরিবেশ বান্ধব বহুমুখি ব্যবহার, ফায়ার লাইটার রোবট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরী, পরিবেশের উপর গ্রিন হাউজ গ্যাসের প্রভাব এর ও তার প্রতিকার, উইন্ড এনার্জি, রিসাইকেল ও সোলার সিস্টেম, ফায়ার এলার্ম সিস্টেম, বায়স্কোপ, সেইফ ড্রাইভ সেইফ হাউজ, জীবনের উৎপত্তি, জেনেটিক ইন্জিনিয়ারিং ইত্যাদি প্রজেক্ট প্রদর্শিত হয়।
সরজমিনে দেখা যায়, প্রজেক্টগুলোতে রোবোটিক্সের বহুমাত্রিক ব্যবহার, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তরুণরা কীভাবে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলবে, গ্রিন হাউস গ্যাসের ব্যবহার, জেনেটিক ইন্জিনিয়ারিং ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে পৃথিবীর রক্ষা করা, জনসাধারণের সোলার এনার্জি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা ইত্যাদি বিষয়ে প্রজেক্ট উপস্থাপিত হয়।
এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে পৃথিবীকে রক্ষার কৌশল সম্পর্কে প্রজেক্ট উপস্থাপিত হয়।
প্রদর্শনী শেষে বিকাল সাড়ে তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে বৈজ্ঞানিক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ।
আলোচনা শেষে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্ন করেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ।
এ সময় বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. জি এম মনিরুজ্জামান, গনিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল মাহবুব ও জিল্লুর রহমান, রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবদুল মাজেদ পাটোয়ারী ও ড. মোহাম্মদ শাহাদাৎ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
এবারের প্রতিযোগিতায় টেকসই বাস্তবায়ন ও পরিবেশ রক্ষার বিভিন্ন মানদন্ডের উপর ভিত্তি করে মোট ১০০ প্রতিযোগিকে পুরস্কার প্রদান করা হবে। প্রতিযোগিতায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ৩০ জন শিক্ষক বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
এদিকে বিজ্ঞান জাদুঘর থেকে একটি সাইন্টিফিক বাস এক্সিবিশন করা হয়েছে। যেখানে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানভিত্তিক বিভিন্ন গবেষণা ও অনুসন্ধান করতে পারবে । এছাড়াও একটি টেলিস্কোপ রয়েছে যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যায় আকাশ পর্যবেক্ষণ করতে পারবো।
এ বিষয়ে কুমিল্লার নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা সিফা বলেন, আজ জাতীয় বিজ্ঞান উৎসবে অংশগ্রহণ করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমাদের প্রজেক্ট হলো বর্জ্য পদার্থের মাধ্যমে বিদ্যুৎ তৈরি করা। আমাদের শহরের বর্জ্য গুলো সংরক্ষণ করে তাপ দিয়ে তা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা, বিদ্যুৎ সংকট কমানো এবং আমদানির ফলে বিদ্যুতের দাম বেড়ে যায় তা আমাদের প্রজেক্টর মাধ্যমে হ্রাস পাবে।
সাইন্স ক্লাবের সভাপতি আমান উল্লাহ বলেন, কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বেশ কিছু চমৎকার প্রজেক্ট উপস্থাপন করছেন। এগুলো যদি ভবিষ্যতে বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে অনেক প্রতিবন্ধকতা দূর করা সম্ভব। শিক্ষার্থীরা রোবটিক্সকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন যার মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তিতে অনেক ভালো কিছু করা সম্ভব।
উল্লেখ্য, আজ শনিবার সকল প্রতিযোগিতা সম্পন্ন হলেও পুরুস্কার বিতরণীর তারিখ পরবর্তীতে জানানো হবে।