নভেম্বর ২৪, ২০২৪

রবিবার ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

কুমিল্লা নামেই বিভাগ চাই: জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি

Cumilla City
কুমিল্লা শহর | ছবি: রাইজিং কুমিল্লা/শাদমান আল আরবী

সরকার পতনের পর আবারও কুমিল্লায় বিভাগ স্থাপনের দাবি উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বাংলাদেশের  শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রাচীন বাংলার এই শহরটি বর্তমানে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

কুমিল্লার ইতিহাস: বাংলাদেশের ব্রিটিশ-ভারতের প্রাচীনতম শহরগুলোর মধ্যে কুমিল্লা অন্যতম। আগে এর নাম ছিল ত্রিপুরা জেলা। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে জনসভা হয়েছিল। ১৯৬০ সালে প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের ফলে কুমিল্লা পৃথক জেলার মর্যাদা পায়।

কুমিল্লা বিভাগের দাবি: ১৯৮৬ সাল থেকেই ‘কুমিল্লা বিভাগ’ গঠনের দাবি উঠে আসছে। গোমতী নদীর তীরে অবস্থিত এই শহরকে ‘পথিকৃৎ কুমিল্লা’ বলা হয়। ১৯৮৬ সালে কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়ন আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তৎকালীন কুমিল্লা পৌরসভার চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। ১৯৮৯ সালে বৃহত্তর কুমিল্লা ও বৃহত্তর নোয়াখালীর ছয়টি জেলা নিয়ে কুমিল্লা বিভাগ প্রতিষ্ঠার দাবি উঠে। কুমিল্লা গণফোরাম নামে একটি সামাজিক সংগঠন এই দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। পরে সংগঠনের নাম হয় ‘কুমিল্লা গণদাবি পরিষদ’।

কেন কুমিল্লায় বিভাগ? বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালীর ৬টি জেলায় প্রায় দুই কোটি মানুষ বসবাস করেন। এই অঞ্চলের আয়তন ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত সিলেট, বরিশাল ও রংপুর বিভাগের চেয়েও অনেক বেশি। কুমিল্লায় সরকারের প্রায় সব ধরনের প্রতিষ্ঠান আছে। প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে কুমিল্লায় বিভাগ হলে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ওপর জনগণের চাপ কমবে। রাজধানী ঢাকা শহরে বাড়তি লোকের চাপ হবে না এবং যানজটও কমে আসবে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ছয় জেলার মানুষের জন্য একটি কেন্দ্রীয় স্থান।

কুমিল্লার সমৃদ্ধি: কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন ও শিক্ষা বোর্ডসহ সরকারের অনেকগুলো দপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয় বিদ্যমান রয়েছে এই জেলায়। শিগ্রই কুমিল্লার জন্য বরাদ্দকৃত হাই টেক পার্ক স্থাপন হতে যাচ্ছে। এখানে রয়েছে মনোলোভা নৈসর্গিক লালমাই ও ময়নামতি পাহাড়। ভারতীয় সীমান্তবর্তী কুমিল্লার রাজেশপুরে রয়েছে ইকোপার্ক। শহরের মধ্যে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী ধর্মসাগর। কুমিল্লাজুড়ে রয়েছে প্রাচীন সভ্যতার নানা নিদর্শন।

কুমিল্লার অর্থনীতি: একটা সময় ব্যাংক ও ট্যাংকের শহর হিসেবে কুমিল্লার খ্যাতি ছিল। কুমিল্লার খাদি, তাঁতশিল্প, কুটিরশিল্প, বিজয়পুরের মৃৎশিল্প, মাতৃভান্ডারের রসমালাই ও ময়নামতির শীতলপাটি বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছে। সম্প্রতি জিও-গ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন (জিআই) বা ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে কুমিল্লার রসমালাই। কুমিল্লা ইপিজেড, কুমিল্লার বিবিরবাজার স্থলবন্দর, কৃষিক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন, দিদার সমবায় সমিতি, দাউদকান্দির প্লাবনভূমিতে মৎস্য চাষ এখানকার অর্থনৈতিক উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখে আসছে।

কুমিল্লার ঐতিহ্য: কুমিল্লায় রয়েছে অষ্টম শতকে নির্মিত কোটবাড়ীর শালবন বৌদ্ধবিহারসহ প্রায় অর্ধশতাধিক প্রত্নসম্পদ। রয়েছে ময়নামতি জাদুঘর। এখানকার কোটবাড়ীতে রয়েছে ড. আখতার হামিদ খানের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পল্লি উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড), ব্রিটিশ আমলের কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাস, কুমিল্লা বিমানবন্দর, সুদীর্ঘ রেললাইন।

এই শহরের বড় হয়েছেন দেশের নারী জাগরণের অগ্রদূত নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী, উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ শচীন দেববর্মন, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, ভাষাসৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ও বাংলাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা করার অন্যতম সহযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম। এখানে এসেছিলেন অহিংসার বাণী নিয়ে মহাত্মা গান্ধী। আরও এসেছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

এছাড়াও কুমিল্লায় রয়েছে শতবর্ষের ঐতিহ্যে লালিত দেশের একমাত্র সার্ভে প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সার্ভে ইনস্টিটিউট।

সর্বশেষ বলা যায়, কুমিল্লাবাসীর দৃঢ় বিশ্বাস কুমিল্লা নামেই বিভাগ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে কুমিল্লাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ করবেন সরকার।