মঙ্গলবার ১২ আগস্ট, ২০২৫

কুমিল্লা নগরীতে ঝুলছে প্রায় দুই কোটি টাকার অচল ক্যামেরা

ইউএনবি

কুমিল্লা নগরীর মোড়ে ঝুলে আছে অচল সিসিটিভি ক্যামেরা। ছবি : ইউএনবি

নগরবাসীর নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থাপন করা হয়েছিল ৯০টি অত্যাধুনিক সিসিটিভি ক্যামেরা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), স্বয়ংক্রিয় গাড়ির নম্বর শনাক্তকরণ, মুখাবয়ব চিহ্নিতকরণ, নাইট ভিশন এবং ৩৬০ ডিগ্রি ঘূর্ণন সুবিধার মতো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এসব ক্যামেরা অপরাধ দমন ও যানজট নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে—এমনটাই প্রত্যাশা ছিল নগর কর্তৃপক্ষের।

কিন্তু দুঃখজনকভাবে, বছরখানেক ধরে এসব ক্যামেরার অধিকাংশই অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এর ফলে নাগরিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে এবং এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।

২০২১ সালের ডিসেম্বরে যখন এসব ক্যামেরা স্থাপন করা হয়, তখন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন আশাবাদী ছিল যে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে অপরাধ দমন, যানজট নিয়ন্ত্রণ এবং জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে। নগরীর ফৌজদারি মোড়, চকবাজার, কান্দিরপাড়, টমছম ব্রিজ, নবাববাড়ি চৌমুহনীসহ ৯০টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এসব ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ ক্যামেরার লেন্স ধুলাবালিতে ঢাকা, তারের অবস্থা নাজুক এবং অনেক ক্যামেরার মুখ অন্যদিকে ঘুরে আছে। ফলে কাঙ্ক্ষিত এলাকায় ফুটেজ পাওয়া যাচ্ছে না।

এই প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিল কুমিল্লা – ৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের মালিকানাধীন নাইস পাওয়ার আইটি সলিউশন লিমিটেড। ২০১৮ সালে সরকারি ক্রয়নীতি অমান্য করে কোটেশন পদ্ধতিতে কাজ পেয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। অভিযোগ রয়েছে, সিটি করপোরেশন থেকে নিয়মিত মাসিক বিল উত্তোলন করা হলেও রক্ষণাবেক্ষণের কোনো কাজই হয়নি। ফলে ধীরে ধীরে ক্যামেরাগুলো অকেজো হতে থাকে। এমনকি সিটি করপোরেশনের প্রধান ফটকের ক্যামেরাও এখন অচল।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টাকা নিলেও দায়িত্ব পালন করেনি। কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমতিয়াজ আহমেদ জিতু বলেন, “নগরীতে চুরি-ছিনতাই বেড়েছে। অপরাধী শনাক্ত করার একমাত্র উপায় সিসি ক্যামেরা। অথচ সিটি করপোরেশনের ৯০টি ক্যামেরাই অকেজো। আমরা আশা করি কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।” একজন বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, ছিনতাই ও ইভ টিজিংয়ের মতো অপরাধ বাড়লেও ক্যামেরাগুলো চালু না থাকায় কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক কর্মকর্তা মোহাম্মদ খায়রুল বাশার জানান, সম্প্রতি নতুন টেন্ডারের মাধ্যমে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০টি ক্যামেরা সচল করা হয়েছে এবং বাকিগুলোর কাজ চলছে।” তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেবে।

সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ মামুন বলেন, “আগের ঠিকাদারদের বাদ দিয়ে নতুন লোক দিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে নষ্ট ক্যামেরাগুলো সচল করা হচ্ছে এবং শিগগিরই সব ক্যামেরা চালু হবে।”

তবে কর্তৃপক্ষের এই আশ্বাসে পুরোপুরি ভরসা রাখতে পারছেন না নগরবাসী। দীর্ঘদিনের গাফিলতি এবং অনিয়মের কারণে তাদের মধ্যে হতাশা ও অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। তাদের মতে, শুধু আশ্বাস নয়, শহরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। নিয়মিত মনিটরিং এবং সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়া এ ধরনের প্রকল্পের সফলতা অসম্ভব বলে মনে করছেন অনেকে।

আরও পড়ুন