এ যেন অন্য এক প্রকৃতি। ঘুরঘার বিলের অবস্থান কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার দোল্লাই নবাবপুর, বাতাঘাসী ইউনিয়ন, দাউদকান্দির দক্ষিণ ইলিয়টগঞ্জ ও চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার সাচার ইউনিয়নে। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে এ বিলের আয়তন প্রায় শত একর।
বিলের দিগন্তবিস্তৃত জলরাশি ও বর্ণিল জলজ উদ্ভিদের স্নিগ্ধতা দর্শনার্থীদের মনে আনন্দের দোলা দিয়ে যায়। বিলের লাল সাদা শাপলার মায়াবি সৌন্দর্যের হাতছানিতে সেখানে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার কুটুম্বপুর থেকে সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে গল্লাই যাওয়া যায়। তারপর হাঁটা পথ পেরিয়ে ঘুরঘার বিল। সূত্রমতে, প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠা বেগুনি ও সাদা শাপলা বিলের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে।
এ বিলে প্রায় ৫০ রকমের বেশি দেশি প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। রয়েছে বিবিধ প্রজাতির জলজ প্রাণি ও মৌসুমি পাখি। পানিতে নিমজ্জিত আছে বিভিন্ন প্রজাতির শৈবালসহ নানা জলজ উদ্ভিদ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মীরাখোলা গ্রামের পাশে খালে বাঁধা অনেকগুলো ছোট নৌকা। অনেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন। ছোট নৌকা ভাড়া নিয়ে ঘুরছেন। খালের স্বচ্ছ জলে হাত ভিজিয়ে সুখানুভূতি নিচ্ছেন। পরিবারের ছোট সদস্যদের জলজ উদ্ভিদ সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছেন। কেউ শাপলা তুলছেন। কেউ ছবি বা সেলফিতে ব্যস্ত। অপরদিকে দূরের কোন নৌকায় সাউন্ড বক্সে বাজছে আঞ্চলিক গান। এ সময়ে ঘুরঘার বিল আনন্দ বিলে রূপ নেয়।
স্থানীয় কৈকরই গ্রামের বাসিন্দা আমির হোসেন বলেন, আমাদের পাশের গ্রাম ইলিয়টগঞ্জে রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আমরা সেখানের শিক্ষার্থী। পাশে ঘুরঘার বিল। ঘুরগার বিলের জীব বৈচিত্র্য আমাদের প্রকৃতি সম্পর্কে শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে।
ইলিয়টগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের বাসিন্দা শিক্ষাবিদ মুন্সী আনোয়ার পাশা রাসেল বলেন, শৈশব থেকে এ বিলের নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন জনশ্রুতি শুনে আসছি। কেউ বলেন, ঘুরঘা নামের এক ধরনের পোকার প্রচুর বিচরণ ছিলো এ বিলে। সেই পোকার নামে এটির নামকরণ হয় ঘুরঘার বিল। আবার কেউ বলেন, এতো বড় বিল ঘুরতে ঘুরতে শেষ করা যায় না বলে এর নাম ঘুরার বিল বা ঘুরঘার বিল। এ বিল সংরক্ষণ জরুরি। এতে প্রাকৃতিক মাছ উৎপাদনের পাশাপাশি চিত্ত বিনোদনেরও সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে চান্দিনার উপজেলা চেয়ারম্যান তপন কুমার বক্সী বলেন, ঘুরঘার বিলে বিপুল পরিমাণে প্রাকৃতিক মাছ উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। যা পুরো চান্দিনা উপজেলার চাহিদা মেটাতে পারে। বিলের মাছ উৎপাদনের সুযোগ সৃষ্টি ও সৌন্দর্য সংরক্ষণের বিষয়ে আমরা মনোযোগ দিবো।