নভেম্বর ২৮, ২০২৪

বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর, ২০২৪

কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী বাটিক পোশাক যাচ্ছে বিদেশেও

Comilla's traditional batik clothing is also going abroad
কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী বাটিক পোশাক যাচ্ছে বিদেশেও। ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লার কয়েকটি গ্রামে যুগের পর যুগ তৈরি হচ্ছে বাটিক কাপড়। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা আর ক্রেতার চাহিদার কথা ভেবে নিত্যনতুন ডিজাইন ফুটিয়ে তুলছেন কারিগররা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহের পাশাপাশি বিদেশে রফতানি হচ্ছে এসব কাপড়। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হচ্ছে গ্রাম। তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

বাটিকের গ্রামগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কমলপুর। সদর উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী ছোট্ট একটি গ্রাম। রঙে ও মানে টেকসই হওয়ায় এ গ্রামের বাটিকের রয়েছে বিশেষ সুনাম। এ ছাড়া যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঐতিহ্যের এ বাটিক পোশাকে এসেছে নজরকাড়া সব নান্দনিক ডিজাইন। ক্রেতাদের কাছেও বাটিকের শাড়ি, থ্রি-পিস, শার্ট ও বেড শিটের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বছরে প্রায় ৪০-৪৫ কোটি টাকার পোশাক যাচ্ছে দেশ-বিদেশে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, কমলপুরের লাল মিয়া নামের এক ব্যক্তির হাত ধরেই বাটিকের যাত্রা। ভারতের কলকাতা ও ত্রিপুরা রাজ্যে কাপড়ে মোম ও রঙ দিয়ে ব্লক তৈরির কাজ শেখেন তিনি। গ্রামে এসে তিনি তার ভাই মোহন মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে বাটিক তৈরি শুরু করেন।

স্থানীয়রা জানান, কুমিল্লার বাটিক কাপড় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে কয়েক যুগ আগ থেকে। জেলার সদর উপজেলার কমলপুর ও সদর দক্ষিণ উপজেলার গলিয়ারা গ্রামে বাটিক কাপড় তৈরি হচ্ছে স্বাধীনতার বহু আগ থেকে। দুটি গ্রামে ১৫টিরও বেশি বাটিক কারখানা রয়েছে। শাড়ি, থ্রি পিস, বিছানার চাদর, ওড়নাসহ হরেক রকম কাপড় তৈরি হয় গ্রামটিতে।

বাটিক কারিগর কামরুল হাসান বলেন, বাটিক কাপড়ের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় এর বিপুল চাহিদা রয়েছে। তাই তারাও কাজে ব্যস্ত থাকছে। এতে মজুরীও ভালো মিলছে।

সিল্কের ওপর বাটিক প্রিন্টের শাড়ি যেমন আকর্ষণীয় তেমনই সালোয়ার-কামিজ-ওড়নায় বাটিকের অনবদ্য কাজ পোশাকে আনে দৃষ্টিনন্দন মাধুর্য। এ ছাড়া রয়েছে বাটিকের আরামদায়ক ফতুয়া বা শার্ট। নতুন নতুন নকশা আর স্বল্পমূল্যের জন্য কুমিল্লার বাটিক বরাবরই ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।

দক্ষিণ উপজেলার গলিয়ারা গ্রামের বাটিক কাপড় ব্যবসায়ী মনোয়ার হোসেন বলেন, এখন দিনরাত চলছে কাপড় তৈরির কাজ। চাহিদা থাকায় উৎপাদনও বেশ ভালো। কারিগররাও লাভবান হচ্ছে। ভালো মজুরী পায় তারা। বাটিক ব্যাবসায়ী কুমিল্লার চন্দন দেব রায় জানান, বাংলাদেশের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত কুমিল্লার বাটিক যাচ্ছে সারা দেশে।

মোহন মিয়া জানান, বর্তমানে শুধু কমলপুরেই রয়েছে শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি-পিস, শার্ট ও বেডশিট তৈরির ১৫ টির মতো কারখানা। তবে কমলপুরের বাটিক এখন কমলপুরেই সীমাবদ্ধ নেই। পাশের আনন্দপুর, গলিয়ারা, বিবির বাজার ও গোমতীর ওপারে ইটাল্লা গ্রামেও কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানায় হাজারের বেশি শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন কুমিল্লার উপমহাব্যবস্থাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী এ পোশাক শিল্পের প্রসার ও বিপণনে আমরা প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা করি এবং সহজ ঋণের ব্যবস্থা করেছি।