বর্ষা মৌসুম এলেই কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মাধাইয়া ইউনিয়নের কলাগাঁও গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার ব্যস্ত হয়ে পড়ে মাছের ফাঁদ চাঁই তৈরির কাজে। কুমিল্লায় এটি ‘আনতা’ নামে পরিচিত।
বাঁশের শলা দিয়ে তৈরি এই চাঁই হলো তাদের জীবিকার প্রধান উৎস। বিশেষ করে গ্রামের নারীরা ঘরে বসে এই কাজ করে বাড়তি আয় করে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরাতে ভূমিকা রাখছেন।
বাঁশের শলা থেকে জীবন: নদী-নালা, খাল-বিল হাওরের সুবিধা মতো স্থানে রেখে মাছ শিকার করা হয় এই চাঁই দিয়ে। পানিতে মাছ চলাচল করতে এক সময় চাঁইয়ের ভেতরে ঢুকলে আর বের হতে পারে না। বাঁশ ও সুতা দিয়ে বিভিন্ন মাপের চাঁই তৈরি করা হয়। ছোট সাইজের চাঁই বিক্রি হয় ৯০-১০০ টাকা, মাঝারি সাইজের ২৫০-৩০০ টাকা এবং বড় সাইজের ২ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত।
নারীদের স্বাবলম্বীতা: চুলায় ভাত বসিয়ে নারীরা পিঁড়িতে বসেই করে চাঁইয়ের বিভিন্ন অংশ তৈরির কাজ। প্রবীণ নারীরা পানের কৌটা পাশে রেখে উঠোনে বসে এ কাজ করেন। তবে এ পেশায় আগের মতো লাভ না থাকলেও বাপ-দাদার পেশা আঁকড়ে ধরে আছে ওই পরিবারগুলো। স্কুলপড়ুয়া ছেলে মেয়েরাও বাবা-মাকে এ শিল্পে সহযোগিতা করে। বছরের ৬ মাস গ্রামের প্রতিটি পরিবার চাঁই বানিয়ে থাকে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চাঁইয়ের চাহিদা: স্থানীয় ও আশপাশের হাটের দিনগুলোতে জেলে এবং মৎস্য ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যায় এসব চাঁই। কুমিল্লা ছাড়াও পটুয়াখালী, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ, বরিশাল, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর জেলার মানুষ অর্ডার দিয়ে এখানে চাঁই কিনতে আসেন।
এ বিষয়ে চাঁইয়ের কারিগর কামরুল ইসলাম বলেন, চাঁই তৈরির কাজে নারীদের অংশগ্রহণ বেশি। ফলে সংসারে সচ্ছলতায় ভূমিকা রাখছেন নারীরা। পুরো বছরই এ গ্রামের বেশিরভাগ পরিবার চাঁই বানিয়ে থাকে। মাছ ধরার চাঁই বানিয়ে সংসারে স্বচ্ছলতা আনছেন নারীরা চাঁই তৈরির কারিগর সাইফুল ইসলাম ও বারেক মিয়া জানান, বর্ষা মৌসুমে চাঁই এর কদর বেড়ে যায়।
এ বিষয়ে মরিয়ম বেগম বলেন, চাঁই তৈরীর জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভও আগের চেয়ে একটু কম হয়। এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বাসসকে বলেন, কলাগাঁও গ্রামের প্রায় সকলেই কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। ওই গ্রামের প্রায় সকল মানুষ চাঁই বানিয়ে এখন স্বাবলম্বী বলে জানান তিনি।