শুক্রবার ১৮ জুলাই, ২০২৫

কুমিল্লায় যাত্রীর ফেলে যাওয়া ১৫ লাখ টাকা ফিরিয়ে দিলেন ইজিবাইক চালক

Easybike driver returns Tk 1.5 million left by passenger in Comilla
অটোরিকশাচালক অনিক | ছবি: সংগৃহীত

লোভের ঊর্ধ্বে উঠে সততার এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন কুমিল্লার এক ইজিবাইক চালক। তার গাড়িতে ফেলে যাওয়া ১৫ লাখ টাকাভর্তি ব্যাগ যাত্রীকে ফেরত দিয়ে তিনি এখন শহরজুড়ে প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) ঘটে যাওয়া এই ঘটনা কুমিল্লাজুড়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং ইজিবাইক চালক অনিকের সততা কুড়িয়েছে সর্বমহলের প্রশংসা। অনিক কুমিল্লা নগরীর চৌধুরীপাড়া এলাকার বাসিন্দা।

জানা গেছে, কুমিল্লার পানপট্টি এলাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ী মরণ শীল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে তার শিশু সন্তানকে নিয়ে ইজিবাইকে করে দারোগাবাড়ি এলাকার স্কুলে গিয়েছিলেন। তাড়াহুড়োয় ইজিবাইক থেকে নামার সময় তিনি ভুলবশত তার সঙ্গে থাকা ১৫ লাখ টাকার ব্যাগটি গাড়িতেই ফেলে যান। সন্তানকে স্কুলে দিয়ে ফিরে আসার পর তিনি বুঝতে পারেন তার টাকার ব্যাগটি ইজিবাইকেই রয়ে গেছে।

এরপর তিনি বহু খোঁজাখুঁজি করেও সেই ইজিবাইক বা চালককে খুঁজে পাননি। প্রায় ঘণ্টাখানেক পর যখন তিনি বাসার কাছে ফিরছিলেন, তখন দেখেন যেখান থেকে ইজিবাইকে উঠেছিলেন, সেখানেই সেই চালক তাকে খুঁজছেন। এরপর আরও কয়েকজনের উপস্থিতিতে চালক অনিক তার টাকার ব্যাগটি মরণ শীলকে অক্ষত অবস্থায় ফেরত দেন।

ইজিবাইক চালক অনিক জানান, “ব্যাগে এত টাকা দেখে আমি প্রথমেই আমার বাবাকে ফোন দিই। তখন বাবা আমাকে বলেন, ‘যার জিনিস, তাকে খুঁজে দিয়ে আয়। হারাম টাকা নিয়ে বাঁচতে চাই না।’ এরপর আমি কয়েকবার ঘুরে ওই এলাকায় এসে অবশেষে ব্যাগের মালিককে খুঁজে পাই।”

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অনিকের বাবা নিজেও একজন অটোরিকশা চালক। তাদের পরিবারে সততা ও নৈতিকতার চর্চা দীর্ঘদিনের। এ কারণেই ১৫ লাখ টাকার মতো বড় অঙ্কের অর্থ পাওয়ার পরও এক মুহূর্তের জন্যও লোভ স্পর্শ করতে পারেনি অনিককে।

ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এই তরুণ অটোচালক প্রশংসার বন্যায় ভাসছেন। স্থানীয় বাসিন্দা ও যাত্রীরা বলছেন, “অনিকের মতো সৎ মানুষ এই সমাজের সম্পদ। এমন মানুষদের সম্মান জানানো আমাদের দায়িত্ব।”

স্বর্ণব্যবসায়ী মরণ শীল আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, “সকালে বাচ্চাকে স্কুলে দিতে যাওয়ার সময় ব্যবসার কাজের জন্য ১৫ লাখ টাকাসহ ব্যাগটি সঙ্গে নিয়ে বেরিয়েছিলাম। কিন্তু রিকশা (ইজিবাইক) থেকে নামার সময় ব্যাগটি ভুলে রিকশায় রয়ে যায়। কিন্তু স্কুল থেকে ফিরে যখন দেখি চালক ও রিকশা কোনোটাই সেখানে নেই, তখন খুব টেনশনে পড়ে যাই। অনেক খুঁজেও তাকে না পেয়ে বাসায় ফিরতে শুরু করি। কিন্তু বাসার কাছে এসে দেখি সে (চালক) দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে পেয়ে সে আমার টাকা আমাকে বুঝিয়ে দেয়।”

তিনি আরও বলেন, “আজকের দিনে এসে সে যে কাজটি করেছে, তা একেবারেই বিরল ঘটনা। সততার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। নিঃসন্দেহে সে একজন সৎ মানুষ। অন্যের টাকার প্রতি তার কোনো লোভ নেই। পৃথিবীতে এ ধরনের মানুষ এখনো আছে বলেই পৃথিবী এখনো সুন্দর। এমন মানুষদের সম্মান জানানো আমাদের দায়িত্ব।”

আরও পড়ুন