মঙ্গলবার ৪ নভেম্বর, ২০২৫

কুমিল্লায় মেয়েকে শেষবারের মতো দেখতে হেলিকপ্টারে ছুটে এলেন বাবা

রাইজিং কুমিল্লা অনলাইন

Rising Cumilla - Father rushes to Comilla by helicopter to see daughter for the last time
কুমিল্লায় মেয়েকে শেষবারের মতো দেখতে হেলিকপ্টারে ছুটে এলেন বাবা/ছবি: সংগৃহীত

এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হলো কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে। গত শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) তিন বছর বয়সী শিশুকন্যা আরওয়ার জানাজায় অংশ নিতে সুদূর আফ্রিকা থেকে হেলিকপ্টারে ছুটে এলেন তার প্রবাসী বাবা ওসমান গণি। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি গুণবতী স্কুল মাঠে অবতরণ করে হেলিকপ্টারটি।

দ্রুতগামী হেলিকপ্টার থেকে নেমে ক্ষিপ্র গতিতে ছুটে যান বাবা ওসমান গণি। শেষবারের মতো আদরের কন্যাকে দেখলেন, ছুঁয়ে আদর করলেন। মেয়ের নিথর দেহ দেখে অঝোরে নিজে কাঁদলেন, কাঁদালেন উপস্থিত সকলকে। এ ঘটনায় এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওসমান গণি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে আফ্রিকার একটি দেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। বিয়ের পর কন্যা আরওয়ার জন্ম হয়। চলতি বছর ছুটিতে এসে দীর্ঘ আট মাস মেয়ের সঙ্গে সময় কাটিয়ে আগস্ট মাসে তিনি আবার আফ্রিকায় ফিরে যান।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে। বাড়ির সামনের পুকুরের পানিতে ডুবে প্রাণ হারায় শিশু আরওয়া।

একমাত্র মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে টিকিট কেটে শুক্রবার সকালে দেশে ফেরেন ওসমান গণি। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দেরি না করে হেলিকপ্টারে চড়ে সকাল ১০টায় পৌঁছান নিজ এলাকায়। স্থানীয় গুণবতী স্কুল মাঠে হেলিকপ্টারটি অবতরণ করে। উৎসুক জনতা সেখানে ভিড় করলেও, বাবার এই আকুল ছুটে যাওয়ার দৃশ্য দেখে কারও মাঝে কোনো হই-হুল্লোড় ছিল না।

বাবা ওসমান গণি জানাজায় অংশ নিয়ে তার কলিজার টুকরা একমাত্র কন্যাকে নিজ হাতে দাফন করেন। এসময় উপস্থিত মুসল্লিরা কেউই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।

ওসমান গণির বন্ধু মো. ইস্রাফিল জানান, মেয়ের শেষবারের মতো দেখার ইচ্ছা শুনে তারা লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে আরওয়ার মরদেহ রাখার ব্যবস্থা করেন। ওসমান গণির ফুফা সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়ের মৃত্যুর খবরটি আমরা বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় বাদলকে জানালে পরদিন সকালেই সে এসে হাজির হয়।’

একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে কন্যাজড়িত কণ্ঠে প্রবাসী ওসমান গণি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বাড়ি থেকে খবর পাই, আমার মেয়ে পানিতে ডুবে মারা গেছে। মেয়েটার সঙ্গে হাজারো স্মৃতি। আরওয়া ভাঙা ভাঙা শব্দে আমার সঙ্গে কথাও বলত। একমাত্র সন্তানের মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না। তাই সন্তানকে নিজ হাতে দাফন করতে বাড়িতে আসার সিদ্ধান্ত নিই।’

আরও পড়ুন