বুধবার ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

কুমিল্লায় মা ও মেয়েকে হত্যার ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য দিল পুলিশ, গ্রেফতার কবিরাজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

Police provide sensational information in the murder of mother and daughter in Comilla, arrest Kabiraj
কুমিল্লায় মা ও মেয়েকে হত্যার ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য দিল পুলিশ, গ্রেফতার কবিরাজ/ছবি: পুলিশের সৌজন্যে

কুমিল্লায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন (২৩) ও তার মা তাহমিনা বেগমকে (৫২) শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটন করেছে ডিবি পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, জিন তাড়ানোর কথা বলে ওই বাড়িতে আসা কবিরাজ মোবারক হোসেন (২৯) প্রথমে সুমাইয়াকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এতে ব্যর্থ হয়েই সে মা ও মেয়েকে নির্মমভাবে হত্যা করে।

মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) ভোরে কুমিল্লা নগরীর ধর্মপুর এলাকা থেকে মোবারক হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপরই হত্যারহস্য উন্মোচিত হয়। মঙ্গলবার দুপুর ২টায় নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কুমিল্লার পুলিশ সুপার (এসপি) নাজির আহমেদ খান এসব তথ্য জানান।

গ্রেফতারকৃত মোবারক হোসেন দেবিদ্বার উপজেলার কালিকাপুর এলাকার মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে। তিনি নগরীর বাবুস সালাম জামে মসজিদের খাদেম হিসেবেও পরিচিত এবং পাশাপাশি কবিরাজি করতেন।

নিহত তাহমিনা বেগম কুমিল্লা নগরীর সুজানগর এলাকার মৃত নুরুল ইসলামের স্ত্রী এবং তার মেয়ে সুমাইয়া আফরিন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। এই ঘটনায় নিহত তাহমিনা বেগমের বড় ছেলে তাজুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

পুলিশ সুপার (এসপি) জানান, নিহত সুমাইয়া আফরিনের মা তাহমিনা বেগম মাঝেমধ্যে বাবুস সালাম জামে মসজিদের খতিব ইলিয়াস হুজুরের কাছে ঝাঁড়ফুকের জন্য যেতেন। সেখানেই মোবারকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। মোবারক নিজেও কবিরাজি করেন জানালে, তাহমিনা তাকে বাসায় আমন্ত্রণ জানান। গত এক মাস ধরে মোবারক তাদের বাসায় যাতায়াত করছিলেন। ঘটনার দিন, অর্থাৎ রবিবার, তাহমিনা বেগম তার মেয়ের জিন তাড়ানোর জন্য মোবারককে বাড়িতে ডাকেন। জিন তাড়ানোর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মোবারক সুমাইয়ার কক্ষে প্রবেশ করেন।

এক পর্যায়ে মোবারক সুমাইয়াকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ সময় ধস্তাধস্তি শুরু হলে তাহমিনা বেগম টের পেয়ে মেয়েকে বাঁচাতে ছুটে যান। মোবারক তখন সুমাইয়াকে তার কক্ষে আটকে রেখে তাহমিনাকে অন্য কক্ষে নিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। এরপর তিনি সুমাইয়ার কক্ষে ফিরে তাকেও শ্বাসরোধে হত্যা করেন। সবশেষে, নিহতদের কাছ থেকে চারটি মোবাইল ফোন ও একটি ল্যাপটপ নিয়ে পালিয়ে যান।

ঘটনার পর পুলিশের একাধিক ইউনিট তদন্ত শুরু করে। ঘটনাস্থলের পাশের একটি স্কুলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে মোবারককে শনাক্ত করা হয়। ঘটনার পর আত্মগোপনে চলে যাওয়া মোবারক সোমবার রাতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। এ সময় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল অভিযান চালিয়ে নগরীর ধর্মপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে।

পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এই হত্যাকাণ্ড মোবারক একাই ঘটিয়েছেন। তবে তদন্ত চলমান রয়েছে এবং অন্য কেউ জড়িত থাকলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে। গ্রেফতারকৃত মোবারককে আদালতে সোপর্দ করার প্রক্রিয়া চলছে।

উল্লেখ্য, সোমবার ভোরে কুমিল্লা নগরীর কালিয়াজুড়ি এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে মা ও মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ।

আরও পড়ুন