কুমিল্লার চান্দিনায় বড় ভাইয়ের কাছে পাওনা টাকা না পেয়ে ছোট ভাইয়ের নামে মামলাসহ টাকা আদায় করতে বিএনপি নেতার হুমকি ও চাপের মুখে মাহবুব আলম রুবেল নামে এক কৃষকদল নেতার আত্মহত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে বিএনপি নেতা গাজী হাসান মাহমুদ হানিফ’কে প্রধান আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করেন।
শনিবার (২৮ জুন) বিকেলে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু ঘটে তার। রবিবার (২৯ জুন) ভোরে স্বামীর আত্মহত্যার পরোচনার অভিযোগ এনে ৪জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞতনামা আরও ৫জনকে আসামী করে চান্দিনা থানায় মামলা করেন নিহতের স্ত্রী রেহানা আক্তার ।
নিহত মাহবুব আলম রুবেল (৪১) উপজেলার মাইজখার ইউনিয়নের কামারখোলা গ্রামের মৃত সিরাজুল ইসলাম এর ছেলে। তিনি ওই ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড কৃষকদল সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। ওই কৃষকদল নেতা বিষপানের আগে তার মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন এবং ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্ত করতে প্রশাসনের প্রতি দাবি করেন।
অভিযুক্ত বিএনপি নেতা গাজী হাসান মাহমুদ হানিফ একই ইউনিয়নের পানিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি মাইজখার ইউনিয়ন বিএনপি’র যুগ্ম আহবায়ক।
নিহতের স্ত্রী রেহানা আক্তার জানান- আমার ভাসুর (স্বামীর বড় ভাই) মফিজ এর সাথে আমার স্বামী পৃথক হয় ২০০১ সালে। মফিজ ভাইয়ের সাথে হানিফ ২০১৬ সালে মাছের খাদ্যের টাকা লেনদেন হয়। হানিফ পাওনা টাকার জন্য চাপ দিলে মফিজ ভাই বাড়ি ছেড়ে বরগুনা জেলায় তার আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যায়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর মফিজ ভাই বরগুনাতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। পরবর্তীতে হানিফ টাকা আদায় করতে আমার স্বামীকে আসামী করে আদালতে মামলা করে। গত ১৫দিন যাবৎ হানিফ আমার স্বামীকে প্রবল চাপ সৃষ্টি করে এবং আরও একটি মামলা ও গ্রাম ছাড়া করার হুমকি দেয়। হানিফ এর ভয়ে আমার স্বামী বাড়ি থেকেও বের হতে পারেনি। কয়েকদিন যাবৎ আমাদের ঘরে বাজার খরচও নেই। তার এই চাপ সহ্য করতে না পেরে আমার স্বামী আত্মহত্যা করে। তিনি আত্মহত্যার আগে তার মোবাইল ফোনে হানিফ এর নির্যাতনের সব কথা রেকর্ড করে রেখে যান।
এদিকে, নিহতের কল রেকর্ডে বলতে শুনা যায়- হানিফ আমার ভাইয়ের কাছে পাওনা টাকার জন্য আমাকে মামলা দেয়। গত কয়েকদিন যাবৎ হানিফ আমাকে ফোন করে এলাকার আওয়ামী লীগের লোকজনের নামে মামলা দিতে চাপ সৃষ্টি করে। না হয়, আমাকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যাবে। যেভাবেই হোক আমার কাছ থেকে টাকা আদায় করবে বলে হুমকি দেয়। বিষয়টি আমি চান্দিনা উপজেলা বিএনপি সভাপতিসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানিয়েও কোন প্রতিকার পাইনি। ফরিদ হলো এসবের নাটের গুরু। এসব ঘটনায় আমি চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সবাই ভাল থাকবেন। পুলিশ যেন ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়- মফিজ এর কাছে টাকা পাবে হানিফ। মফিজ মারা যাওয়ায় হানিফ টাকা আদায় করতে রুবেলকে চাপ সৃষ্টি করে বলে ‘তোর ভাই টাকা নিছে, তুই আমার টাকা দিবি’। রুবেল অনেকের কাছে বিচার চেয়েছে, কারও কাছে বিচার পায়নি। শনিবার সকালে নিজ বাড়িতে বিষপান করে রুবেল। তাকে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে সেখানে তার মৃত্যু ঘটে।
এ ব্যাপারে বিএনপি নেতা গাজী হাসান মাহমুদ হানিফ জানান- মফিজ মারা যাওয়ার পর রুবেলসহ আরও ৩জন আমার টাকা পরিশোধ করবে বলে কথা দেয়। তারা টাকা না দেয়ায় আমি আদালতে মামলা করি। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিতে চাপ সৃষ্টি করার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন- এসব কথা মিথ্যা।
চান্দিনা থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) জাবেদ উল ইসলাম জানান- নিহতের স্ত্রীর লিখিত অভিযোগ পেয়ে আমরা মামলা গ্রহণ করি। ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
সম্পাদক : শাদমান আল আরবী | নির্বাহী সম্পাদক : তানভীর আল আরবী
ঠিকানা : ঝাউতলা, ১ম কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০। ফোন : ০১৩১৬১৮৬৯৪০, ই-মেইল : [email protected], বিজ্ঞাপন: [email protected], নিউজরুম: [email protected] © ২০২৩ রাইজিং কুমিল্লা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Design & Developed by BDIGITIC