ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকা (২৪) । শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাতে কুমিল্লার বাগিচাগাঁওয়ের বাসা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি জবির আইন বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।
আত্মহত্যার আগে ফাইরুজ তার এক সহপাঠী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টরের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ এনে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। এই নিয়ে চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে চলছে সমালোচনা।
দেলোয়ার হোসেন ঢালী নামের একজন লেখেন, ঘটনাকে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করে, আসল খুনিকে শাস্তি প্রদান করা হোক।
একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিক আল আমিন নামের তার ফেসবুক টাইমলাইনে লেখেন— একজন হয়তো ফাঁস নেওয়ার আগে অনেককেই অভিযোগ জানিয়েছিলেন ফাইরুজ অবন্তিকা; কিন্তু প্রতিক্রিয়া পাবেন হয়তো এবার লাশ হওয়ার পর!
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী এবং এখন টিভির জয়েন্ট নিউজ এডিটর আনিসুর সুমন তার ফেসবুক টাইমলাইনে লেখেন, ‘ফাইরুজ অবন্তিকা নামে একটা জলজ্যান্ত মানুষ ঘোষণা দিয়ে নাই হয়ে গেল!
মেয়েটা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে পড়ত। ২০২২ সালের দিকে মেয়েটার সঙ্গে কথা হয়। লেখালেখির প্রতি ওর খুব ঝোঁক। কাজের প্রতিও সমান ইচ্ছে ছিল। মূলত ফাইরুজই আমাকে খুঁজে বের করে লেখার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে। পরে ওর নামে কয়েকটি বাইলাইন ফিচার স্টোরি পত্রিকায় আমি ছাপি।
কিছুক্ষণ আগে নিউজ দেখে পরিচিত লাগল। পরে ওর ফেসবুকে ঢুকে আঁতকে উঠলাম। আহা, একটা তরুণ প্রাণ বিচার চেয়ে না পেয়ে উল্টো আত্মহত্যার পথ বেছে নিল। যাওয়ার আগে তার দেওয়া তথ্যমতে দুই অপরাধীর নাম প্রকাশ করে বিস্তারিত লিখে গেছে।
মেয়েটা মরেও কী শান্তি পাবে? কালপ্রিট দুটোর শাস্তি চাওয়া ছাড়া কিইবা বলার আছে। ’
আসমিতা ইসরাত নামে একজন ফেসবুক কমেন্টে লেখেন, কতটা ডিপ্রেশনে গেলে এত স্ট্রং একটা মানুষ যে কিনা অন্যদের আত্মহত্যা করতে নিষেধ করত সেই গতরাতে এই পথ বেছে নিল।
জোবাইর সিদ্দিক নামে এক ব্যক্তি অবন্তিকাকে নিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, সুইসাইড কোনো কিছুর সমাধান না। যাদের জন্য সেই সুইসাইড করতে বাধ্য হয়েছে বলে উল্লেখ করে গেছে তাদের সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনা হোক।
আত্মহত্যার আগে ফেসবুক পোস্টে অবন্তিকা লিখেছেন, ‘আমি যদি কখনো সুইসাইড করে মারা যাই, তবে আমার মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী থাকবে আমার ক্লাসমেট আম্মান সিদ্দিকী আর তার সহকারী হিসেবে তাকে সাপোর্টকারী জগন্নাথের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম। আম্মান যে আমাকে অফলাইন অনলাইনে থ্রেটের ওপর রাখতো সে বিষয়ে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করেও আমার লাভ হয় নাই। দ্বীন ইসলাম আমাকে নানানভাবে ভয় দেখায় আম্মানের হয়ে যে আমাকে বহিষ্কার করা ওনার জন্য হাতের ময়লার মতো ব্যাপার। আমি জানি এখানে কোনো জাস্টিস পাবো না।’
ওই পোস্টে আরও লেখেন, ‘আমি উপাচার্য সাদোকা হালিম ম্যামের কাছে এই প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক হিসেবে বিচার চাইলাম। আর আমি ফাঁসি দিয়ে মরতেসি। আমার ওপর দিয়ে কী গেলে, আমার মতো নিজেকে এতো ভালোবাসে যে মানুষ সে মানুষ এমন কাজ করতে পারে।’
এদিকে অভিযুক্ত সহপাঠী ও সহকারী প্রক্টরকে সাময়িক বরখাস্ত: এদিকে ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত সহপাঠী আইন বিভাগের আম্মান সিদ্দিককে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তাকে দ্রুত গ্রেপ্তারের নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।