
কুমিল্লা মহানগরের ছোটরা এলাকায় অবস্থিত মালেকা মমতাজ বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির দায়ে বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মোজাম্মেল হককে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছিল ১৭ জানুয়ারি, ২০১৯ তারিখে, যখন ছাত্রীটি বই পরিবর্তনের জন্য শিক্ষক মোজাম্মেল হকের কাছে যায়। ভুক্তভোগী ছাত্রীর অভিযোগ অনুযায়ী, অভিযুক্ত শিক্ষক তাকে বইয়ের গোডাউনে নিয়ে দরজা বন্ধ করে শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের চেষ্টা করেন। ছাত্রীটি কোনোমতে পালিয়ে এসে বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানায়, পরবর্তীতে ভুক্তভোগী ছাত্রী ও তার বাবা-মা প্রধান শিক্ষকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এই অভিযোগের ভিত্তিতে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি জরুরি সভা করে শিক্ষক মোজাম্মেল হককে সাময়িক বরখাস্ত করে এবং একটি পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টে অভিযুক্ত শিক্ষক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। যদিও অভিযুক্ত শিক্ষক লিখিতভাবে ঘটনার জন্য অনুতপ্ত হয়ে অঙ্গীকার করে বলেন, তিনি ৩/৪ মাসের মধ্যে স্বেচ্ছায় শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে দেবেন, তবুও তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে এবং তার লিখিত জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় কমিটি তাঁকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়। এই বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের আপীল ও আরবিটেশন বোর্ডে পাঠানো হলে সেখানেও তা গৃহীত হয়।
তবে, বহিষ্কৃত শিক্ষক মোজাম্মেল হক বর্তমানে আইনি প্রক্রিয়া ব্যবহার করে আবারও মালেকা মমতাজ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদানের পাঁয়তারা করছেন বলে জানা গেছে। এটি তাঁর বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ নয়; অনুসন্ধানে দেখা যায়, এই বিদ্যালয়ে যোগদানের পূর্বে ব্রাহ্মণপাড়া থানাধীন সিদলাইয়ের নাজনীন উচ্চ বিদ্যালয়েও ছাত্রীকে যৌন হয়রানির দায়ে তিনি অবসর নিতে বাধ্য হন। এমনকি ২০১৬ সালেও মালেকা মমতাজ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্রীর উপর যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠলে, কোতোয়ালি থানা পুলিশ বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করলে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক শাহাদাৎ হোসেন, অভিযুক্ত শিক্ষক মোজাম্মেল হকের মুচলেকা নিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিয়েছিলেন।
ছাত্রীকে যৌন হয়রানির দায়ে বরখাস্তকৃত শিক্ষক মোজাম্মেল হকের পূনরায় বিদ্যালয়ে যোগদানের পায়তারার বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের নিয়োজিত আইনজীবী রফিকুল ইসলাম হোসাইনী জানান, বর্তমানে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি বিলুপ্ত হওয়ায়, একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সভাপতির দায়িত্ব নেন। বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক ওরাসিরুল হাসানের অসহযোগিতার কারণে তিনি আইনি বিষয়ে বিদ্যালয়ের বর্তমান সভাপতি মহোদয়ের সাথে এ বিষয়ে মিটিং করে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারছেন না, যা অভিযুক্ত শিক্ষকের পুনঃযোগদানের পথ সুগম করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক ওরাসিরুল হাসান রাইজিং কুমিল্লাকে বলেন, আমরা অভিযুক্ত শিক্ষক মোজাম্মেল হকের পক্ষে দেয়া হাইকোর্টের রায়ের বিপরীতে উচ্চ আদালতে আপীল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
স্কুলের পক্ষের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম হোসাইনী রাইজিং কুমিল্লাকে বলেন, হাইকোর্ট অভিযুক্ত শিক্ষক মোজাম্মেল হকের পক্ষে রায় দিলেও স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি ও শিক্ষার্থীদের আপত্তির মুখে উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে শীঘ্রই আপীল করা হবে।
নারী শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এই বিদ্যালয়ে যেন কোনোভাবেই ছাত্রীকে যৌন হয়রানির দায়ে বরখাস্তকৃত শিক্ষক মোজাম্মেল হক পুনরায় যোগদান করতে না পারে এবং সুষ্ঠু আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ছাত্রীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হয় সেটাই মালেকা মমতাজ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও বিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকাবাসী জোর দাবী।








