কুমিল্লার চান্দিনায় একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার দুই এনজিও কর্মীর ওপর নৃশংস নির্যাতনের ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা সৃষ্টি হয়েছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, তাদের জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গিয়ে পুরুষ কর্মীকে গাছে বেঁধে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয় এবং নারী কর্মীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করা হয়। পরবর্তীতে এই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাদের পরিবারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা হয়।
এই ন্যক্কারজনক ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশে কর্মরত প্রায় তিন শতাধিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, যুব প্ল্যাটফর্ম, নারী আন্দোলন, পরিবেশবাদী সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন, সামাজিক উদ্যোক্তা এবং গবেষকদের ঐক্যজোট সিএসও অ্যালায়েন্স।
সিএসও অ্যালায়েন্সের পক্ষ থেকে বিবৃতিদাতারা হলেন রাশেদা কে চৌধুরী, ড. ইফতেখারুজ্জামান, শাহিন আনাম, মালেকা বেগম, আসিফ সালেহ, ফারাহ্ কবির, মনসুর আহমদ চৌধুরী, নোমান খান, খায়রুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম, সালমা মাহবুব, কেএএম মোর্শেদ, সাঈদ আহমেদ প্রমুখ।
গণমাধ্যম সূত্রে প্রাপ্ত খবরে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বিবৃতিদাতারা বলেন,, "পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ওই কর্মীদের ওপর অমানবিক নির্যাতন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনার পরেও অপরাধীদের আইনের ফাঁক দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে কিনা তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। এতবড় একটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাকে খাটো করে দেখার বা উপস্থাপনের চেষ্টা ভিকটিমদের ন্যায়বিচার নিশ্চিতে এবং সুরক্ষাকে শুধু হুমকির মুখেই ফেলবেনা বরং স্বাধীনতার পর পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে এদেশের কোটি কোটি সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক ও সার্বিক উন্নয়নে অবদান রাখা লক্ষ লক্ষ এনজিওকর্মীর অবদানকে অগ্রাহ্য করার সামিল।"
সিএসও অ্যালায়েন্সের পক্ষ থেকে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, তারা সরকারের কাছে কিছু সুনির্দিষ্ট দাবিও পেশ করেছেন:
১. দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং ভুক্তভোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
২. ভুক্তভোগীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে কিংবা নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশ সৃষ্টি করে পুলিশি অভিযোগ দায়েরে যেকোনো গাফিলতি বা তথ্য গোপন করার চেষ্টার তদন্ত করে প্রকৃত সত্য উদঘাটন করতে হবে।
৩. গ্রামীণ ও ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে কাজ করা উন্নয়নকর্মীদের জন্য যথাযথ আইনি সুরক্ষা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
৪. উন্নয়নকর্মীরা যেকোন সেক্টরের মতো এদেশের উন্নয়ন অংশীদার। তাঁরা যেন সহিংসতা বা হয়রানির ভয় ছাড়াই মাঠে ময়দানে দায়িত্ব পালন করতে পারেন, তা রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হবে।
৫. নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার মামলাগুলো কঠোরভাবে নথিভুক্ত ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে। এ ব্যাপারে অন্তবর্তী সরকারের গৃহীত সাম্প্রতিক উদ্যোগগুলো যথাযথ বাস্তবায়ন ও মনিটরিং করতে হবে।
সর্বশেষে নারী এনজিওকর্মীকে নগ্ন করে ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকিকে জঘন্য নারী নির্যাতন ও সহিংসতার অভিযোগ হিসেবে বিবেচনা করে বিবৃতিদাতাগণ তদনুসারে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
সম্পাদক : শাদমান আল আরবী | নির্বাহী সম্পাদক : তানভীর আল আরবী
ঠিকানা : ঝাউতলা, ১ম কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০। ফোন : ০১৩১৬১৮৬৯৪০, ই-মেইল : [email protected], বিজ্ঞাপন: [email protected], নিউজরুম: [email protected] © ২০২৩ রাইজিং কুমিল্লা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Design & Developed by BDIGITIC