
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা গেলেও তাদের অর্থ ব্যবস্থা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। কুমিল্লায় অনেক উপজেলা আছে যেখানে রাজনীতি আওয়ামী লীগের টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। বিএনপি নেতারা আমাদেরকে শত্রু মনে করবেন না। এটা আপনাদের ভালোর জন্য বলছি।
শুক্রবার রাত আটটার দিকে কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে আয়োজিত ‘জুলাই সমাবেশে’ সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন। জুলাই অভ্যুত্থানে কুমিল্লার আহত ও শহীদদের সম্মানে এ সমাবেশের আয়োজন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
‘জুলাই সমাবেশে’ সভাপতির বক্তব্যে হাসনাত আব্দুল্লাহ বিএনপি নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন এনসিপিকে শত্রু না ভাবেন। তিনি বলেন, “আমরা যা বলছি, তা আপনাদের ভালোর জন্যই বলছি।”
আওয়ামী লীগের আর্থিক প্রভাবের পাশাপাশি হাসনাত আব্দুল্লাহ আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, “যারা হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত, তারা যখন কোর্টে যায়, কোন বিচারক তাদের জামিন দেয়? এর পেছনে কাদের ইন্ধন রয়েছে, তা আপনি জাতির সামনে প্রকাশ করুন।” আসিফ নজরুলকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, যদি কেউ তাকে কাজ করতে বাধা দেয় বা কোনো ধরনের চাপ সৃষ্টি করে, তবে তিনি যেন তা জনসমক্ষে তুলে ধরেন।
হাসনাত আব্দুল্লাহ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা জামিনে বেরিয়ে এসে শহীদদের বাড়ির সামনে ঘোরাফেরা করছে, যা কেবল তাদের দলের নয়, আসিফ নজরুলেরও ব্যর্থতা। তিনি জানতে চান, জানুয়ারিতে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা থাকলেও মে মাস পর্যন্ত কেন তা হয়নি। তিনি বলেন, “খুনিদের বিচার হচ্ছে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ও প্রথম সংস্কার।”
এনসিপি নেতা স্পষ্ট ভাষায় জানান, তারা সংস্কার ও নির্বাচন দুটোই চান। তবে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত।
অন্যদিকে, হাসনাত আব্দুল্লাহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে মানবিক করিডোর নিয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি জানান। তিনি বলেন, “আমরা কোনো ধোঁয়াশার মধ্যে থাকতে চাই না। আমরা আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব কোনো পরাশক্তির কাছে বন্ধক দেব না। এখানে ভারত, পিন্ডি বা আমেরিকার আধিপত্য চলবে না।”
আওয়ামী লীগের সহযোগী ১৪ দলের বিষয়েও অন্তর্বর্তী সরকারের নীতি স্পষ্ট করার আহ্বান জানান হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘১৪ দলের বিষয়ে এ সরকারের কি চিন্তা সেটি স্পষ্ট করতে হবে। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই। কিন্তু আমরা আশাহত। অনেক কাজে আমরা এখনো বিচার দেখছি না, আহতদের এখনো পর্যন্ত পুনর্বাসন হয়নি, কর্মসংস্থান হয়নি, এখনো পর্যন্ত বিচারের কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত না রাস্তায় নেমে এসেছি ততক্ষণ পর্যন্ত আপনাদের কোনো পদক্ষেপ দেখি নেই।’
কুমিল্লা জেলা ও মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে আয়োজিত এই জুলাই সমাবেশে এনসিপি, বিএনপি, খেলাফতে মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এবি পার্টিসহ বিভিন্ন ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা অংশগ্রহণ করেন।
সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ফেস দ্য পিপলের সম্পাদক সাইফুর রহমান সাগর, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আশিকুর রহমান ওয়াসিম, ড. শাহ মো. সেলিম, রিফাত রশিদ, নাভিদ নওরোজ শাহ, জয়নাল আবেদীন শিশির, এবি পার্টি কুমিল্লা মহানগরের সভাপতি জিএম গোলাম সামদানী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন কুমিল্লা জেলার আহ্বায়ক সাকিব হোসাইন, মহানগরীর আহ্বায়ক আবু রায়হান, সদস্য সচিব মুহাম্মদ রাশেদুল হাসান। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন আরাফ ভূঁইয়া।