নভেম্বর ২৪, ২০২৪

রবিবার ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

কুবি শিক্ষক সমিতির বাঁধায় নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত

কুবি শিক্ষক সমিতির বাঁধায় নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত
কুবি শিক্ষক সমিতির বাঁধায় নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত। ছবি: কুবি প্রতিনিধি
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) শিক্ষক সমিতির বাঁধার কারণে ব্যবস্থাপনা শিক্ষা  বিভাগের প্রভাষক পদের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।  
এদিকে নিয়োগ  বোর্ডে  বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ সদস্য উপস্থিত ছিলেন না। তারা হলেন ওই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড.  মোহাম্মদ মুকছেদুল করিম এবং ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডীন ও মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন সরকার।
এছাড়াও নির্ধারিত সময়ের ২ ঘণ্টা পর পরীক্ষা শুরু করতে গেলে নির্দিষ্ট প্রার্থীকে  নিয়োগ দিতে এই পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছে বলে দাবি করেন শিক্ষক নেতারা।
জানা গেছে, পরীক্ষা নেওয়ার পূর্বে উপাচার্যের কক্ষে শিক্ষক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে উপাচার্য নিজে প্রশ্নপত্র টাইপিং করেন। পরর্বতীতে প্রশ্নপত্র সিলগালা না করে কর্মচারীকে দিয়ে পরীক্ষার হলে প্রশ্নপত্র প্রেরণ করা হয়।
এসময় কোন নিরাপত্তা ছাড়া প্রশ্নপত্র উপাচার্যের হাতে এবং কোষাধ্যক্ষের হাতে দেখা যায়। এছাড়াও নিয়োগ পরীক্ষা শুরু আগে থেকেই উপাচার্যের দপ্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিপ্রার্থী সাবেক  শিক্ষার্থীদের অবস্থান করছেন।
পরবর্তীতে শিক্ষক সমিতির বাঁধার মুখে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ স্থগিত করা হয়। স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন  বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) আমিরুল হক চৌধুরী।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড সকাল ১০টায় শুরু হওয়ার কথা ছিল। যেখানে যাচাই বাছাই করে ৩৫ জন‌ পরীক্ষার্থীকে ডাকা হয়।
তবে সেখানে উপস্থিত ছিলেন না ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. শেখ মকছেদুর রহমান এবং  ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের প্রধান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন সরকারও নিয়োগ বোর্ডে আসেননি। পরে সাড়ে ১২টার দিকে উপাচার্য পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করলে শিক্ষকদের বাঁধায় সেটি সম্ভব হয়নি।
নিয়োগ বোর্ডে না আসার বিষয়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. শেখ মখছেদুর রহমান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন সরকার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কয়জন অধ্যাপক ১ম ও ২য় গ্রেডে আবেদন করেছেন তাদের পদোন্নতি না দেওয়া এবং ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগে জ্যেষ্ঠতা  লঙ্ঘন করে যে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে তার সমাধান না করে প্রফেসর নিয়োগের বোর্ড আয়োজন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, একজন ডিন হিসেবে এসব আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এসবের প্রতিবাদ জানিয়ে আমি বোর্ডে যাইনি। এছাড়া আমি জানতে পেরেছি, কিছু অছাত্র বোর্ড শুরু হওয়ার আগে উপাচার্যের দপ্তরে অবস্থান নিয়েছে। যারা গত ১৯ তারিখ শিক্ষকদের উপর হামলা করেছে। নিরাপত্তা শঙ্কার কারণে আমি সেখানে যাইনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, নিয়োগ পরীক্ষা নিতে গেলে শিক্ষক নেতারা উপাচার্যের বিভিন্ন ‘অনিয়ম’ তুলে ধরেন এবং নিয়োগ সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়মের সুরাহার দাবি জানান।
এ বিষয়ে শিক্ষক নেতারা জানান, উপাচার্য তার নিজের এলাকার প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে আগে থেকেই প্রশ্নপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। নতুন শিক্ষক নিয়োগের অবশ্যই দরকার আছে। কিন্তু ইইজিসির যে অভিন্ন নীতিমালা রয়েছে সেখানে বলা হয়েছে স্বীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মরত শিক্ষকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রয়োজনে নিয়োগের শর্ত শিথিল করা যাবে।
কিন্তু বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সে নিয়মকে তোয়াক্কা না করে নিজেদের মত অবৈধ শর্ত দিয়ে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আমাদের দাবি সকল অবৈধ পদোন্নতি ও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বন্ধ না করা পর্যন্ত আমরা কোন নতুন নিয়োগ দিতে দিব না।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, একটি নিয়োগ পরীক্ষার প্রসেসিং যেমন হওয়া উচিত তেমনটা হয়নি। এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি পরীক্ষার প্রশ্নের সিকিউরিটি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সিলগালাবিহীনভাবে বিভিন্ন কর্মচারীদের কাছে দশ মিনিট প্রশ্ন ছিল।
কাজেই এই নিয়োগ সার্কুলার অবৈধ এবং সার্কুলারে অসংগতি রয়েছে। আমি উপাচার্য মহোদয়কে অনুরোধ করেছি আপনি পরীক্ষা স্থগিত রাখেন। কিন্তু তিনি জোর করে নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। যা কখনোই কাম্য নয়।
এর আগে গত ৫ মার্চ নিয়োগ নীতিমালা বহির্ভূত অবৈধ ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বিজ্ঞপ্তি বাতিল, নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা এবং বর্তমান উপাচার্যের আমলে ইতিপূর্বে নিয়োগ, পদোন্নতি ও) স্থায়ীকরণে যত অনিয়ম, দুর্নীতি ও বৈষম্য হয়েছে সেগুলোর নিষ্পত্তি করার পর নীতিমালা অনুসরণ করে পুনঃবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে যথাযথভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করার দাবি জানায় শিক্ষক সমিতি।
এদিকে নির্দিষ্ট প্রার্থীকে (আব্দুর রাজ্জাক ও জান্নাতুন নেছা) নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম. আবদুল মঈন বলেন, আমি তাদের চিনিও না। যারা অভিযোগ করেছে সে অভিযোগের যদি কোনো প্রমাণ থাকে আমাকে দাও।
তিনি আরও জানান, বিভাগীয় প্রধান ও ডিনের অনুপস্থিতিতে পরীক্ষা চলতে পারে। ডিন ও চেয়ারম্যান ছাড়া বাকি সবাই আমরা আছি। ডিন এবং চেয়ারম্যান দায়িত্বশীল জায়গায় আছেন। কিন্তু ওনারা কেন আসেন নাই আমাদের তা জানায় নাই৷ শিক্ষক সমিতি কতগুলো অন্যায্য দাবি নিয়ে আসছে সেটার সাথে এই পরীক্ষা, এই নিয়োগের কোনো সম্পৃক্ততা নাই। সুতরাং তাদের বাঁধার মুখে স্থগিত করা হয়েছে।