
আল্লাহ তাআলা মানুষকে সম্পদ দান করেছেন, কিন্তু এর মানে এই নয় যে তিনি এর অপচয় করার অধিকার দিয়েছেন। মনে রাখতে হবে, এই সম্পদ কাল কিয়ামতের দিন আপনার জন্য বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে, কারণ মহান আল্লাহ পাক প্রতিটি সম্পদের হিসাব চাইবেন।
কিয়ামতের দিন দিতে হবে পাঁচটি বিষয়ের হিসাব
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন:
“কিয়ামত দিবসে পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ হওয়ার আগ পর্যন্ত আদম সন্তানের পদদ্বয় আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে সরতে পারবে না। তার জীবনকাল সম্পর্কে—কীভাবে অতিবাহিত করেছে? তার যৌবনকাল সম্পর্কে—কী কাজে তা বিনাশ করেছে; তার ধনসম্পদ সম্পর্কে—কোথা থেকে তা উপার্জন করেছে এবং তা কোন কোন খাতে খরচ করেছে এবং সে যতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছিল সে মোতাবেক কী কী আমল করেছে।” (জামে তিরমিজি: ২৪১৬)
প্রাত্যহিক জীবনের অপচয় যা আমরা আমলে আনি না:
আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বহু ছোট-বড় অপচয় করে থাকি, যা হয়তো পৃথিবীর কারও চোখে পড়ে না, কিন্তু মহান রাব্বুল আলামিন এর হিসাব নেবেন।
- ঘরে কেউ নেই, তবুও ফ্যান চলছে বা লাইট জ্বলছে অনেক সময় ধরে।
- ম্যাচের একটি কাঠি বাঁচানোর জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা গ্যাসের চুলা জ্বলছে।
- বাড়িতে পানির পাম্প ছেড়ে একদমই খেয়াল নেই, ট্যাংক ভরে পানি রাস্তায় উপচে পড়ছে।
এই যে প্রাত্যহিক জীবনের অপচয়—এর হিসাব আমাদের মহান রাব্বুল আলামিনকে দিতে হবে।
খাদ্যের অপচয় পরিহার ও পরিমিত ভোজনের নির্দেশ:
রাসূলুল্লাহ (সা.) শুধু সম্পদের নয়, বরং খাদ্যের অপচয় থেকেও বিরত থাকতে কঠোরভাবে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেছেন:
“আদম সন্তান যে সমস্ত ভান্ডার পূর্ণ করে, এর মধ্যে পেট হলো সবচেয়ে খারাপ। আদম সন্তানের জন্য স্বল্প কিছু লোকমাই যথেষ্ট, যা দিয়ে সে তার পিঠ সোজা রাখতে পারে। এর বেশি করতে চাইলে এক-তৃতীয়াংশ খাবারের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক-তৃতীয়াংশ নিশ্বাসের জন্য যেন নির্দিষ্ট করে।” (জামে তিরমিজি ২৩৮০, সুনানে ইবনে মাজাহ ৩৩৪৯, মুসনাদে আহমাদ ৪ / ১৩২)
আপনি অবশ্যই ভালো খাবার খাবেন, কেউ নিষেধ করেনি। শুধু বলা হয়েছে—অপচয়, অপব্যয় করা যাবে না।
অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই:
আল্লাহ পাক পরিষ্কারভাবে সম্পদের ব্যবহার বিষয়ে বলে দিয়েছেন। অথচ আমরা আল্লাহর নির্দেশ মানছি না। অপব্যয়ের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা সতর্ক করেছেন:
“আর তোমাদের অর্থ-সম্পদ অপ্রয়োজনীয় কাজে খরচ করবে না। জেনে রেখো—যারা অপব্যয় করে—তারা শয়তানের ভাই, আর শয়তান নিজ প্রতিপালকের ঘোর অকৃতজ্ঞ।” (সুরা বনি ইসরাইল: ২৭)
আবার সুরা আরাফের ৩১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন:
“তোমরা আহার করো ও পান করো; কিন্তু অপচয় করবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।”
অপব্যয় ও কার্পণ্যের মাঝে ভারসাম্য:
যেখানে দুটো জামায় আপনার চলে যায়, সেখানে ১০টি জামা ক্রয় করার কি কোনো মানে হয়? যারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা ব্যয় করে, কিন্তু অপব্যয় করে না; আবার কৃপণতাও করে না। তাদের বৈশিষ্ট্য হলো:
“আর তারা যখন ব্যয় করে তখন অপব্যয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না; বরং মাঝামাঝি অবস্থানে থাকে।” (সুরা ফুরকান: ৬৭)
আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে অপচয় ও অপব্যয় সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি অন্যদেরও সচেতন করতে হবে। এটি আমাদের ইমানি দায়িত্ব।