বর্তমান যুগেও অনেক মানুষ কালো জাদু, বিদ্বেষণ, বশীকরণসহ নানা জাদুটোনার দ্বারা আক্রান্ত হয়ে অবর্ণনীয় কষ্ট ভোগ করছেন। এসবের প্রভাব কেবল শারীরিক নয়, মানসিক, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনেও গভীর ছায়া ফেলে দেয়।
ইসলামে এসবের অস্তিত্ব অস্বীকার করা হয়নি; বরং পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এর অস্তিত্ব এবং প্রতিকারের স্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে।
জাদু থেকে মুক্তির পথ: ইসলামে বর্ণিত কার্যকরী প্রতিকার
জাদুর ধরন ও প্রাথমিক পদক্ষেপ:
জাদুর প্রভাব দূর করার জন্য প্রথমেই জানা দরকার, কীভাবে ও কোথায় জাদু করা হয়েছে। যদি দেখা যায়, কোনো বস্তু যেমন চুল, চিরুনি বা অন্য কিছু নির্দিষ্ট স্থানে রেখে জাদু করা হয়েছে, তবে সেই বস্তু খুঁজে বের করে পুড়িয়ে ধ্বংস করা জরুরি। এতে জাদুর প্রভাব নষ্ট হয়ে যায়।
যদি জাদুকরকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়, তবে তাকে বাধ্য করতে হবে জাদু নষ্ট করতে। ইসলামি শরিয়তে এমন জাদুকরদের কঠোর শাস্তির কথা বলা হয়েছে। হাদিসে এসেছে, 'জাদুকরের শাস্তি হলো তরবারির আঘাতে তার গর্দান ফেলে দেয়া।' (তিরমিজি)।
কোরআন-হাদিসে বর্ণিত চিকিৎসা ও ঝাড়ফুঁক:
জাদু নষ্ট করতে কোরআনের নির্দিষ্ট আয়াত, সুরা ও দোয়ার মাধ্যমে ঝাড়ফুঁক একটি অত্যন্ত কার্যকর পদ্ধতি। যেমন:
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শেখানো একটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া: اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبْ الْبَاسَ اشْفِهِ وَأَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রাব্বান নাসি উজহিবাল বা’সি, ইশফিহি ওয়া আনতাশ-শাফি, লা শিফায়া ইল্লা শিফায়ুকা শিফায়ান লা ইউগাদিরু সাকমা।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ, মানুষের প্রতিপালক, কষ্ট দূরকারী। আমাকে আরোগ্য দিন, আপনি আরোগ্যকারী। আপনি ছাড়া কোনো আরোগ্যকারী নেই। এমন আরোগ্য দিন যেন কোনো রোগ না থাকে।’ (বুখারি ৫৭৪২)
আরেকটি হাদিসে বর্ণিত ঝাড়ফুঁক: بِسْمِ الله أرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللهُ يَشْفِيكَ، بِسمِ اللهِ أُرقِيكَ
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি আরক্বিক মিন কুল্লি শাইয়িন য়ুযিক। ওয়া মিন শাররি কুল্লি নাফসিন আও আইনিন হাসিদিন; আল্লাহু ইয়াশফিক। বিসমিল্লাহি আরক্বিক।
অর্থ: আল্লাহর নামে আমি আপনাকে ঝাড়ফুঁক করছি। সকল কষ্টদায়ক বিষয় থেকে। প্রত্যেক আত্মা ও ঈর্ষাপরায়ণ চক্ষুর অনিষ্ট থেকে। আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য করুন। আল্লাহর নামে আমি আপনাকে ঝাড়ফুঁক করছি। (মুসলিম ২১৮৬, তিরমিজি ৯৭২)
এই দোয়াগুলো তিনবার পড়ে আক্রান্ত ব্যক্তির ওপর ফুঁ দিলে, পানিতে পড়ে তা পান করালে এবং সেই পানি দিয়ে গোসল করালে ইনশাআল্লাহ আরোগ্য লাভ হয়।
বরই পাতার বিশেষ আমল:
জাদুগ্রস্ত ব্যক্তি বা যারা দাম্পত্য জীবনে অক্ষম হয়ে পড়েছেন, তাদের জন্য বরই পাতার বিশেষ আমল রয়েছে। সাতটি কাঁচা বরই পাতা গুঁড়া করে পানিতে মিশিয়ে তাতে উপরোক্ত আয়াত ও দোয়া পড়ে ফুঁ দিতে হয়। এরপর ওই পানি পান করতে হয় এবং অবশিষ্ট পানি দিয়ে একাধিকবার গোসল করতে হয়।
জাদুর বিরুদ্ধে সুরক্ষার উপায়:
জাদু থেকে বাঁচতে এবং এর প্রভাব থেকে সুরক্ষিত থাকতে কিছু আমল নিয়মিত করা উচিত:
জাদু যেমন বাস্তব, তেমনই তার থেকে মুক্তির উপায়ও ইসলামে স্পষ্টভাবে বর্ণিত। মুমিন ব্যক্তি কোরআনের দোয়া, ঝাড়ফুঁক, বরই পাতার আমল এবং পরহেজগারির মাধ্যমে আল্লাহর রহমত লাভ করে জাদুর ক্ষতি থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ভয় নয় বরং দৃঢ় ঈমান ও আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখা। কারণ, যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি রক্ষা করতেও সক্ষম।
তবে কোনো অবস্থাতেই জাদু থেকে বাঁচতে বা এর প্রতিকার চাইতে কোনো কবিরাজ বা জাদুকরের কাছে যাওয়া উচিত নয়। তবে কেউ যদি কোরআন ও হাদিস দ্বারা ঝাড়ফুঁক করেন, যাদেরকে 'রাকি' বলা হয়, তাদের কাছে গেলে ভিন্ন বিষয়।
সম্পাদক : শাদমান আল আরবী | নির্বাহী সম্পাদক : তানভীর আল আরবী
ঠিকানা : ঝাউতলা, ১ম কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০। ফোন : ০১৩১৬১৮৬৯৪০, ই-মেইল : [email protected], বিজ্ঞাপন: [email protected], নিউজরুম: [email protected] © ২০২৩ রাইজিং কুমিল্লা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Design & Developed by BDIGITIC