জুন ৫, ২০২৫

বৃহস্পতিবার ৫ জুন, ২০২৫

কাফকার “দ্য মেটামরফোসিস” এবং বর্তমান সমাজ বাস্তবতা

এক আবেগের নাম মাসিক পাঠচক্র। বর্তমান প্রযুক্তিগত বিশ্বে সবাই যখন মোবাইল,গেমস নিয়ে ব্যস্ত। তখন পাঠচক্রের ভাবনাটা আসলেই তাৎপর্যপূর্ণ। একদল তরুণ-তরুণী একত্রে বসে কোনো বিষয়ে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন পাঠচক্রে। পাঠচক্রের আলোচক নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর গভীর আলোচনা করেন এবং শ্রোতাদের এই বিষয়টি সম্পর্কে বোধগম্য করেন।

তারই পরিপ্রক্ষিতে,বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম,কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার মে মাসের পাঠচক্র অনুষ্ঠিত হয় কাফকার ‘দ্য মেটামরফোসিস’ এর উপর। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রফেসর ড. এম এম শরীফুল করীম স্যার প্রধান আলোচক ছিলেন। লেখক ফোরামের সদস্যরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই পাঠচক্রে অংশগ্রহণ করেন।

এই পাঠচক্রের মূল বিষয় ছিল,বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় লেখক ফ্রান্স কাফকা’র লেখা “দ্য মেটামরফোসিস” বইয়ের উপর। ১৯১৫ সালে রচিত এই বাস্তবধর্মী বইটিতে লেখক মূলত পুঁজিবাদী ব্যবস্থার নির্মমতা সম্পর্কে বলেছেন। একটা মানুষ কীভাবে যন্ত্রে পরিণত হয়, বাস্তবতায় কীভাবে সে সমাজ ও পরিবার থেকে আলাদা হয়ে যায়—এ সম্পর্কেও কাফকা বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। এই গল্পের মূল বিষয় এবং প্লটগুলোও আমাদের বাস্তবিক জীবনের সাথে মিলে যায়।

প্রধান আলোচক ড. শরীফুল করীম স্যার প্রথমে লেখকের প্রাথমিক জীবন ও তখনকার সমসাময়িক লেখার ধরন সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি বলেন,ফ্রান্স কাফকা মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন এবং তার বাবা ছিল বলপ্রয়োগকারী। তারপর বিংশ শতাব্দীর লেখনীর ধারা সম্পর্কে বলেন। বিংশ শতাব্দীর লেখনীর অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়,যা ওই শতাব্দীকে প্রতিনিধিত্ব করে। যেমনঃ ১ম ও ২য় বিশ্বযুদ্ধ,বৈজ্ঞানিক চরম উৎকর্ষতা,এক্সটেনশিয়ালিজম, নিহিলিজম ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি। তিনি বলেন বিংশ শতাব্দীর মানুষ এত পরিমাণ সুযোগ-সুবিধা পেতে লাগলো যার ফলে অনেকে অস্তিত্বকে নিয়ে প্রশ্ন করতে লাগল।

গল্পের শুরুতে মূলত একজন পুরুষকে দেখায় যে কিনা তার পরিবারের একমাত্র আয়-উপার্জনকারী ব্যাক্তি গ্রেগর স্যামসা। একদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠে দেখে সে একটা বড় কীটে পরিণত হয়ে গেছে। এ অবস্থা মূলত তার কর্মহীনতাকে বুঝিয়েছে। তার জীবন ছিল অফিস থেকে বাসা পর্যন্ত। কোনো সুখ-শান্তি ছিল না। একমাত্র আয়-উপার্জনকারী ব্যক্তি হিসেবে তাঁকে সবাই ভালোবাসত। কিন্তু যখন সে পরিবারের বোঝা হয়ে গেছে, তখন তাঁকে কেউ দেখতে পারতো না। শুধু তার বোন তাকে খাবার দিত কয়েকদিন পর সেও তাকে ঘৃণা করতে শুরু করল। এক পর্যায়ে সে মারা গেল।

এছাড়াও উপন্যাসে বেশ কিছু বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। ভাইয়ের প্রতি বোনের ভালোবাসা এবং কর্মহীন মানুষ যে সমাজ ও পরিবারের বোঝা ইত্যাদি।

এ উপন্যাসে ঔপন্যাসিক দেখিয়েছেন, বর্তমান সমাজে একজন মানুষ কীভাবে যন্ত্রে পরিণত হয় এবং সে যদি তার দ্বায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়ে কীভাবে সে বোঝায় পরিণত হয়। উপন্যাসের আরেকটা দিক হলো,এই পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা। যে ব্যবস্থায় গরীবরা তথা নিম্ন শ্রেণির কর্মচারীদের শোষণ করে মালিকরা কীভাবে আঙ্গুল ফোলে কলা গাছ হচ্ছেন। এই সমাজ ব্যবস্থা শ্রমিককে মূল্যায়ন করে না,করে তার শ্রমকে ইত্যাদি।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

আরও পড়ুন