
রাইজিং ডেস্ক

ঈশপের ‘কাক ও কলসি’ গল্পটি ছোট–বড় সবারই জানা। তৃষ্ণার্ত অবস্থায় কলসির তলানির পানি পেতে নুড়িপাথর ফেলে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছিল কাক। বাস্তবেও কাক শুধু বুদ্ধিমান প্রাণীই নয়—অসাধারণ স্মৃতিশক্তির অধিকারী। এমনকি ১৭ বছর ধরে কারও প্রতি ক্ষোভ ধরে রাখতে পারে প্রাণীটি। যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় উঠে এসেছে এই চমকপ্রদ তথ্য।
গবেষকদের মতে, কাকেরা তাদের প্রতি যে কোনো হুমকি বা বিরক্তির ঘটনা অত্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে মনে রাখে। তাই কোনো কাক যদি হঠাৎ আক্রমণাত্মক আচরণ করে বা আপনাকে দেখে জোরে জোরে ডাকতে থাকে, তবে ভাবতে পারেন—গত দুই দশকে আপনি কিংবা আপনার পরিচিত কেউ কি কাকটিকে বিরক্ত করেছিলেন?
তাদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, কাক হয় ক্ষমা করতে অক্ষম, নয়তো ক্ষমা করতে অনিচ্ছুক। বরং তারা বুদ্ধিমত্তা ও স্মৃতিশক্তি ব্যবহার করে সেই ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে রাখে এবং দীর্ঘ সময় ধরে বিরক্ত করে। এ কারণে বিশ্বের বিভিন্ন শহরে ক্ষুব্ধ কাকের আক্রমণের ঘটনাও লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
২০০৬ সালে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞানী জন মারজলাফ একটি গবেষণায় বিষয়টি আবিষ্কার করেন। তিনি একটি বিশেষ মুখোশ পরে সাতটি কাককে সাময়িকভাবে ধরে তাদের পায়ে আংটি পরিয়ে শনাক্তকরণ মার্কিং করেন এবং নিরাপদে ছেড়ে দেন।
পরবর্তী বছরগুলোতে তিনি ও তাঁর সহকারীরা নিয়মিত ওই মুখোশ পরে ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াতেন এবং কাকগুলোর খাবার দিয়ে প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতেন। দেখা যায়, ৫৩টি কাকের একটি দলে ৪৭টি কাক মুখোশধারী ব্যক্তির ওপর তীব্র চিৎকার ও তিরস্কার চালায়। গবেষকের হিসাবে, সরাসরি আক্রান্ত কাকের তুলনায় তিরস্কারকারী কাকের সংখ্যা সাতগুণ বেশি—যা থেকে বোঝা যায়, কাক শুধু নিজেরাই ঘটনা মনে রাখেনি, তাদের পরিবার ও আশপাশের কাকদেরও বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছে।
গবেষণার সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফল পাওয়া যায় ২০১৩ সালে—যখন কাকগুলোর সমন্বিত তিরস্কার সবচেয়ে তীব্র রূপ নেয়। পরবর্তী বছরগুলোতে তা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। অবশেষে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে সেই মুখোশ পরে হাঁটার সময় কোনো কাক আর আক্রমণ বা তিরস্কার করেনি। অর্থাৎ প্রায় ১৭ বছর লেগেছে ক্ষোভ প্রশমিত হতে।
গবেষণায় আরও দেখা যায়—কাকেরা হুমকি ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে আলাদা করে চিনতে পারে। গবেষকরা যখন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির মতো দেখতে একটি নিরপেক্ষ মুখোশ ব্যবহার করেন, তখন কাকেরা কোনও রকম বিরক্তি দেখায়নি। পরে স্বেচ্ছাসেবকেরা মুখোশ পরে কাকের কাছে গেলে, তারা জানতেও পারেননি যে কাকগুলো তাঁদের ‘বিপজ্জনক’ নাকি ‘নিরপেক্ষ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কিন্তু বিপজ্জনক মুখোশ দেখলেই কাকগুলো তাৎক্ষণিকভাবে আক্রমণাত্মক হয়।
গবেষণা ছাড়াও কাকের ক্ষোভ নিয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা উঠে এসেছে মেইল অনলাইনের এক প্রতিবেদনে।
লন্ডনের ডালউইচ এলাকার বাসিন্দারা জানান, কাক হঠাৎ ওপর থেকে নেমে এসে আক্রমণ করেছে। বাসিন্দা এলিসন ফ্রিন জানান, গাড়ি থেকে নামতেই কাকদল তাঁকে লক্ষ্য করে ভয়ংকরভাবে আক্রমণ করে। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে—অনেকে প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দেন।
কাকের বুদ্ধিমত্তা শুধু ক্ষোভ ধরে রাখায় সীমাবদ্ধ নয়। পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গেছে—
কাকরা সরঞ্জাম বা টুল তৈরি করতে পারে
গণনা করতে পারে
যানবাহনের সাহায্যে বাদাম ভাঙায়
লাঠি ও হুক ব্যবহার করে গাছের গর্ত থেকে খাদ্য বের করে
এ ছাড়া তারা দলবদ্ধভাবে বাস করে, সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং কখনো কখনো মৃত কাকের জন্য ‘অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া’ করে বলে গবেষণায় উল্লেখ আছে। তাদের যোগাযোগ পদ্ধতি উন্নত, এবং সম্ভাব্য হুমকির তথ্য দলগতভাবে ছড়িয়ে দিতে পারে। এমনকি কোনো ব্যক্তিকে বিপদ হিসেবে চিহ্নিত করলে অন্য কাকদেরও সে তথ্য শেখায়।
গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে ‘প্রসিডিংস অব দ্য রয়্যাল সোসাইটি বি’ জার্নালে।
সম্পাদক : শাদমান আল আরবী | নির্বাহী সম্পাদক : তানভীর আল আরবী
ঠিকানা : ঝাউতলা, ১ম কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০। ফোন : ০১৩১৬১৮৬৯৪০, ই-মেইল : [email protected], বিজ্ঞাপন: [email protected], নিউজরুম: [email protected] © ২০২৩ রাইজিং কুমিল্লা সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। | Design & Developed by BDIGITIC