ভারতের মাটিতে শুরু হতে যাওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপ ক্রিকেট মাতাবেন বেন স্টোকস, বাবর আজম, বিরাট কোহলিদের মতো বড় তারকারা। কিন্তু টুর্নামেন্টে নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটারদের দিকেও থাকবে নজর।
তাওহিদ হৃদয় (বাংলাদেশ) : ২০২০ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী বাংলাদেশ দলের সদস্য ছিলেন হৃদয়। সেখান থেকে সরাসরি জাতীয় দলের হয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া মিডল অর্ডার এ ব্যাটার বড় কিছু করার সক্ষমতা রাখেন। এমনকি বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে বিশ^কাপের ফাইনালে তুলতে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটার। টি২০ ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে সাফল্যের পর গেল মার্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে অভিষেক হয় ২২ বছর বয়সি হৃদয়ের। এরপরই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দলেও সুযোগ পেয়ে যান তিনি। একদিনের ফরম্যাটে এখন পর্যন্ত ১৭টি ওয়ানডে খেলে ৫টি হাফ-সেঞ্চুরিতে নিজের জাত চিনিয়েছেন হৃদয়। তার মেন্টর মুশফিকুর রহিমের উপহার দেওয়া ব্যাট দিয়ে ভারত মাতানোর অপেক্ষায় হৃদয়।
ব্যাটার হৃদয়ের প্রশংসা বাংলাদেশের সহকারী কোচ নিক পোথাসের কণ্ঠে, ‘দক্ষতার দিক দিয়ে সেরাটা স্পর্শ করার প্রবল ইচ্ছা তার মধ্যে সব সময় বিরাজমান। এছাড়া তার মধ্যে অনেক সম্ভাবনা এবং শেখার প্রবল ইচ্ছা আছে। তার সক্ষমতায় আমি রোমাঞ্চিত।’
মাথিশা পাথিরানা (শ্রীলংকা) : ২০১৯ বিশ্বকাপ শেষে লাসিথ মালিঙ্গার অবসরের পর থেকে শ্রীলংকা এমন একজন বোলারের সন্ধান করছে যে কিনা প্রতিপক্ষের উইকেট শিকারে পারদর্শিতা দেখাবেন এবং ব্যাটারদের একপ্রান্তে আটকে রাখবেন। মালিঙ্গার জায়গায় সম্ভাব্য বোলার হিসেবে পাথিরানাকে খুঁজে পেয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মালিঙ্গার মতোই স্লিঙ্গিং, ডেলিভারির সময় নিচ থেকে হাত নিয়ে আসা ও ভয়ংকর ইয়র্কারে প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করার দক্ষতা দেখিয়েছেন তিনি। গত বছর আইপিএলে এডাম মিলনের বদলি হিসেবে পাথিরানাকে দলে নেন চেন্নাই সুপার কিংসের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। খেলার সুযোগ পেয়েই অভিষেকের প্রথম বলেই শুভমান গিলের উইকেট তুলে নেন পাথিরানা। গত জুনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হয় তার। দ্বিতীয়বারের মতো বিশ^কাপের শিরোপা জিততে হলে ‘বেবি মালিঙ্গা’র পারফরমেন্সের উপর নির্ভর করতে হবে শ্রীলংকাকে। শ্রীলংকার কোচ ক্রিস সিলভারউড বলেন, ‘খুব দ্রুতই শিখতে পারে এবং ম্যাচে সেটি দ্রুত প্রয়োগও করতে পারে। এটি নিজের মতো করেই করে সে।’
নূর আহমাদ (আফগানিস্তান): বলের উপর দারুণ নিয়ন্ত্রণ, গতি ও বৈচিত্র্যপূর্ণ বোলিংয়ে নতুনত্ব এনে বিশ্ব ক্রিকেটে নজর কেড়েছেন বাঁ-হাতি রিস্ট স্পিনার নূর। মাত্র ১৪ বছর বয়সে আফগানিস্তানের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল নূরের। মাত্র ১৭ বছর বয়সে গেল বছর শ্রীলংকার বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হয় তার। একমাত্র টি২০তে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১০ রানে ৪ উইকেট নিয়ে নিজের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছেন ১৮ বছর বয়সি নূর। সতীর্থ রশিদ খানকে আদর্শ মানা নূর গেল বছর আইপিএলে গুজরাট লায়ন্সের হয়ে নজর কাড়েন। আইপিএলের পাশাপাশি সারা বিশে^র ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে নূরের চাহিদা ব্যাপক। বিশ^কাপে রশিদের যোগ্য ব্যাকআপ হতে পারেন তিনি। নূরকে নিয়ে রশিদ বলেন, ‘এই ছোট বাচ্চাটা শুধু শিখতে চায়। সে এখন সুযোগ পেয়েছে এবং আমি খুব খুশি, সে সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে। এটি আফগানিস্তান ক্রিকেটের জন্য দারুণ খবর।’
গাস অ্যাটকিনসন (ইংল্যান্ড): ২০১৯ সালে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিশ^কাপ জয়ে বড় কৌশল ছিল গতিময় বোলিং। ঐ দলে জোফরা আর্চার এবং মার্ক উডের মতো গতিময় বোলার ছিল। যারা ধারাবাহিকভাবে ঘণ্টায় ৯০ মাইল গতিতে বোলিং করেছেন। আসন্ন বিশ্বকপ দলে উড থাকলেও, দীর্ঘমেয়াদি কনুইয়ের ইনজুরি থেকে সুস্থ হতে লড়াই করছেন আর্চার। বিশ^কাপে দলের সাথে রিজার্ভ হিসেবে থাকছেন আর্চার। তবে দলে আছেন গতি দিয়ে ঝড় তোলার আরেক পেসার অ্যাটকিনসন। চলতি বছরের শুরুর দিকের দুর্দান্ত পারফরমেন্সের সুবাদে সেপ্টেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথমবারের মতো ডাক পান ২৫ বছর বয়সি এই পেসার। ৩ ম্যাচে মাত্র ১টি উইকেট নিলেও ঘণ্টায় ৯৫ মাইল গতিতে বোলিং করেছেন অ্যাটকিনসন।
অ্যাটকিনসনকে নিয়ে ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুক বলেন, ‘দেখে মনে হয় না, দ্রুত গতিতে বল করতে তার খুব বেশি পরিশ্রম করতে হয়। দেখে মনে হয়, তার বোলিংয়ে আরও গতি আছে।’
তেজা নিদামানুরু (নেদারল্যান্ডস): সকল ভারতীয় ক্রিকেটারেরই স্বপ্ন থাকে বিশ্বকাপ খেলা। কিন্তু নেদারল্যান্ডসের হয়ে বিশ্বকাপ খেলার আশা করে না তারা। ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে জন্ম নিলেও নিউজিল্যান্ডে বেড়ে উঠেন নিদামানুরু। পরবর্তীতে নেদারল্যান্ডসে পাড়ি জমান তিনি। গত বছরের মে মাসে নেদারল্যান্ডসের হয়ে খেলার সুযোগ পান নিদামানুরু। অভিষেক ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হাফ-সেঞ্চুরি করেন তিনি। এ বছরের জুনে জিম্বাবুয়ের মাটিতে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচে ৭৬ বলে ১১১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে বিশ্ব ক্রিকেটে চমক দেখান তিনি। নিদামানুরুর ইনিংস সুবাদে ঐ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের করা ৩৭৪ রান স্পর্শ করে ম্যাচটি টাই করে সুপার ওভারে জয় পায় নেদারল্যান্ডস। প্রথমবারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি দু’বারের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাছাই পর্বে সেরা দুই দলের একটি হয়ে বিশ্বকাপে খেলার টিকিট পায় নেদারল্যান্ডস।