মঙ্গলবার ২ ডিসেম্বর, ২০২৫

এইডস রোগীর অর্ধেকই পুরুষ সমকামী: চলতি বছর রোগী শনাক্ত বেশি ঢাকায়, এরপর কুমিল্লায়

রাইজিং ডেস্ক

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে এইচআইভি/এইডস আক্রান্তের সংখ্যা। ১৯৮৯ সালে দেশে প্রথম এইডস রোগী শনাক্ত হওয়ার পর দীর্ঘ ৩৫ বছরে এবারই এক বছরে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী শনাক্ত হওয়ার রেকর্ড হয়েছে। চলতি বছরে নতুন করে প্রায় ২ হাজার মানুষের শরীরে এইচআইভি শনাক্ত হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৩৯ শতাংশ বেশি।

আজ ১ ডিসেম্বর, বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষ্যে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, নতুন শনাক্ত রোগীদের প্রায় অর্ধেকই পুরুষ সমকামী। সংক্রমণের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে ঢাকা জেলা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা, কুষ্ঠ ও এইডস নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্যে জানা গেছে, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত দেশে নতুন করে আনুমানিক ২ হাজার মানুষ এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছেন। আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪৩৮ জন।

এই এক বছরে এইডসে মারা গেছেন ২০০ জন, যা আগের বছরের (১৯৫ জন) তুলনায় বেশি। দেশে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্ত এইচআইভি রোগীর সংখ্যা ১৬ হাজার ৮৬৩ জন। এদের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন ২ হাজার ২৮১ জন। বর্তমানে চিকিৎসার আওতায় রয়েছেন ৮ হাজার ৩০৯ জন।

বিভাগ ও জেলা অনুযায়ী সংক্রমণের চিত্র:

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এইডস/এসটিডি প্রোগ্রামের দেওয়া তথ্যমতে চলতি বছর সবচেয়ে বেশি বিভাগ ও জেলাভিত্তিক রোগী শনাক্ত বিশ্লেষণে দেখা গেছে—

  • ঢাকা জেলায় সর্বোচ্চ ৩৩৪ জন এইচআইভি আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।

  • কুমিল্লায় ১০৮ জন।

  • চট্টগ্রাম ও খুলনায় প্রায় ১০০ জন করে রোগী শনাক্ত।

রাজধানীর বাইরে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠছে সিরাজগঞ্জ ও বরিশালে।

  • সিরাজগঞ্জে গত ৫ বছরে শনাক্ত রোগী ২৫৫ জন, মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের।

  • বরিশালে গত এক বছরে ২০ জন এইচআইভি পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১১ জনই শিক্ষার্থী

চিকিৎসকদের মতে, একই সিরিঞ্জে মাদক গ্রহণ, অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক ও সচেতনতার অভাব এ সংক্রমণের প্রধান কারণ।

তরুণ ও বিদেশফেরতদের মধ্যে সংক্রমণ বেশি:

সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, ২০–৩০ বছর বয়সী তরুণ এবং বিদেশফেরত শ্রমিকদের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের হার উল্লেখযোগ্য।
২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এইচআইভি সন্দেহে ২ হাজার ৪৮৬ জনের পরীক্ষা করা হয়, এর মধ্যে ১৮৪ জনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়ে।

শনাক্ত রোগীদের মধ্যে ছিলেন—

  • পুরুষ: ১৪১ জন

  • নারী: ৩৮ জন

  • হিজড়া: ৪ জন

  • সমকামী পুরুষ: ৭১ জন

সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, এইডস চিকিৎসা ব্যবস্থাতেও রয়েছে গুরুতর সংকট। সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে এমআরআই, বায়োপসি, সিডি-৪ কাউন্টের মতো জরুরি পরীক্ষার সুবিধা নেই। জনবল সংকট, ডায়ালাইসিস সুবিধা না থাকায় জটিল রোগীদের চিকিৎসা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা যায়, দেশে শনাক্ত মোট এইচআইভি রোগীর প্রায় ৫০ শতাংশই পুরুষ সমকামী। ২০১৫ সালে দেশে পুরুষ সমকামীর সংখ্যা ছিল আনুমানিক ১ লাখ ১১ হাজার, যা ২০২৩ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬৭ হাজারে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, সমকামী পুরুষদের ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ সংক্রমণ বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এই জনগোষ্ঠী সমাজে ‘নীরব ঘাতক’ হিসেবে রোগ ছড়িয়ে দিচ্ছে—যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে ৯৫-৯৫-৯৫ লক্ষ্য অর্জনের কথা রয়েছে।
অর্থাৎ—

  • ৯৫ শতাংশ সংক্রমিত ব্যক্তিকে শনাক্ত

  • ৯৫ শতাংশকে চিকিৎসার আওতায় আনা

  • ৯৫ শতাংশ রোগীর ভাইরাল লোড নিয়ন্ত্রণে রাখা

কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘনবসতি, অসচেতনতা, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর একাংশের চিকিৎসার বাইরে থাকা এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা এ লক্ষ্য অর্জনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আজ ১ ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবস ২০২৫ পালিত হচ্ছে। এ উপলক্ষ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত এবারের প্রতিপাদ্য— ‘সব বাধা দূর করি, এইডসমুক্ত সমাজ গড়ি’।

আরও পড়ুন